বাড়ছে সাইবার প্রতারণা, উদ্ধার এক কোটির বেশি, ২২১টি মামলায় গ্রেফতার ২৫ অভিযুক্ত
বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু ডিজিটালি আর্থিক লেনদেন করতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সাইবার প্রতারকদের টার্গেটে হচ্ছেন মুর্শিদাবাদ জেলার বাসিন্দারা। বিভিন্ন কায়দায় প্রতারণা করা হচ্ছে। সঞ্চিত অর্থ খুইয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তদন্তে নেমে সাফল্যও মিলছে। গত তিন মাসে মুর্শিদাবাদ সাইবার থানার পুলিশ ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে, যা সর্বকালীন রেকর্ড বলেই দাবি করছেন আধিকারিকরা।
কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় জমি বিক্রির টোপ দিয়ে চলছে প্রতারণা। আবার কখনও অনলাইনে জিনিসপত্র কেনাবেচার টোপ দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সাইবার জলিয়াতরা। শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্টের নাম করে বিদেশি শেয়ার অপারেটর্স কোম্পানির নাম নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা শুরু করেছে সাইবার প্রতারকদের একটি গ্যাং।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেলডাঙার প্রাক্তন শিক্ষক হাজি আশরাফ আলি জমি কিনতে গিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা খুইয়েছিলেন। সাইবার থানার তৎপরতায় ১৩ লক্ষ টাকা ফেরত পেয়েছেন। আশরাফ সাহেব বলেন, ফেসবুক দেখে তিন বিঘা জমির সন্ধান পাই। জমির দাম ছিল মোট ৪৫ লক্ষ টাকা। কয়েক ধাপে মোট ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়ার পর বুঝতে পারি, আমি প্রতারিত হয়েছি। কিছুটা টাকা ক্যাশ এবং বেশিরভাগটা অনলাইনে ট্রান্সফার করেছিলাম। আরটিজিএস করেও টাকা দিয়েছি। কিন্তু জমি রেজিস্ট্রি করে দেয়নি। সাইবার থানার পুলিশ আমার ১৩ লক্ষ টাকা ফেরত দিয়েছে।
সাইবার প্রতারণার শিকার হয়েছেন গৃহবধূ পুতুল সাহাও। তিনি ৩৮ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে টাকা ফেরত পাচ্ছিলেন না। পুতুলদেবী বলেন, একটি নামী ফান্ড ম্যানেজার সংস্থার নাম নিয়ে সাইবার প্রতারকরা টাকা নিয়েছিল। প্রচুর লোন করে শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করি। অনেক টাকা নিয়ে নেয়, তারপর আমার টাকা আটকে দেয়। তখন সাইবার থানায় অভিযোগ জানালে আমার সাত লক্ষ টাকা উদ্ধার করে দেওয়া হয়েছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) মাজিদ ইকবাল খান বলেন, বিভিন্নভাবে প্রতারকরা সাইবার প্রতারণা করছে। মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। কোনও অভিযোগ এলে আমরা অবশ্যই তদন্ত করে তা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু মানুষের একটু অসাবধানতার ফলে প্রতারকরা সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। আমরা অধিকাংশই পুরনো ফোন পাল্টানোর সময় তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস রেখে দিই। এমনকী, সিমটাও বের করি না। সেই সব সিম এবং ডকুমেন্টস কোনওভাবে সাইবার প্রতারকদের হাতে চলে গেলে তাতে সমস্যা বাড়বে। তাই মানুষের মধ্যে সচেতনতা খুব দরকার।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(লালবাগ) রাসপ্রিত সিং বলেন, তিন মাসে ২৫ জন সাইবার প্রতারক গ্রেপ্তার হয়েছে। ২১১টি মামলায় এই সাফল্য এসেছে। মোট ১ কোটি ১ লক্ষ টাকা আমরা উদ্ধার করে প্রতারিতদের হাতে তুলে দিলাম। এখনও ৫২টি কেসের তদন্ত চলছে। আগামীতে আরও কয়েকজন গ্রেফতার হবে ও প্রতারণার অর্থ প্রতারিতদের হাতে তুলে দেব।