নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও হাওড়া: দেশে প্রথম নদীর তলদেশ দিয়ে যাওয়া মেট্রো। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত ২২ আগস্ট গোটা মেট্রো রুটের উদ্বোধন করেছিলেন। তা চালুর ২৭ দিনের মাথায় বসে গেল ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সিগন্যাল ব্যবস্থা। বুধবার বিশ্বকর্মা পুজোর সকালে হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভ রুটের মেট্রো দফায় দফায় থমকে গেল। সব মিলিয়ে আড়াই ঘণ্টার বেশি ব্যাহত হল সবচেয়ে অত্যাধুনিক মেট্রো রুটের পরিষেবা। বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হাওড়া ময়দান থেকে যাত্রী নিয়ে মেট্রো সল্টলেক অভিমুখে রওনা দিতেই ঘটে বিপত্তি। সিটিবিটি (কমিউনিকেশন বেসড ট্রেন কন্ট্রোল) ব্যবস্থায় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালে চলে এই ট্রেন। সেই আধুনিক ব্যবস্থাই বিগড়ে যায় এদিন। কেন এই অবস্থা, তার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি রেল। যার জেরে বেলা ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ গোটা রুট বন্ধ থাকে। পরবর্তীতে হাওড়া ময়দান থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত বিক্ষিপ্ত পরিষেবা শুরু হলেও যাত্রী দুর্ভোগ কমেনি। এসপ্ল্যানেড থেকে সেক্টর ফাইভ অংশে পরিষেবা সম্পূর্ণ অচল ছিল দুপুর ১টা পর্যন্ত।
এদিন বিশ্বকর্মা পুজো থাকায় সকালের দিকে শিয়ালদহগামী বাসের সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল। তার উপর মেট্রো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চূড়ান্ত নাজেহাল হতে হয় যাত্রীদের। সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়েন সেক্টর ফাইভ এলাকার অফিস যাত্রীরা। এদিন সকাল ১০টা ৩৬ মিনিটে সমস্যার শুরু। হাওড়া ময়দান ও হাওড়া স্টেশনে টিকিট কেটে দীর্ঘক্ষণ মেট্রো না পেয়ে অনেকেই বাইরে বেরিয়ে ট্যাক্সি, ক্যাব কিংবা বাস ধরতে দৌড় লাগান। এক ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষার পর শ’য়ে শ’য়ে যাত্রীকে টিকিটের দাম ফেরতের ব্যবস্থা করে রেল। এরজন্য আবার লম্বা লাইন পড়ে। এ প্রসঙ্গে কলকাতা মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক এস এস কারনানকে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মোবাইল স্যুইচড অফ পাওয়া যায়। জনসংযোগ ও অপারেশন বিভাগের কর্তারাও ফোনে অধরা ছিলেন।
এদিকে, হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত সরাসরি মেট্রো পরিষেবা চালুর পর যাত্রীরা এসিতে মসৃণ যাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। দক্ষিণেশ্বর রুটের যাত্রীরা প্রতিদিন মেট্রো যাত্রার বিপর্যয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। কিন্তু ইস্ট-ওয়েস্ট রুটে এই প্রথম বড় বিভ্রাট হওয়ায় যাত্রীরা দিকভ্রান্ত হয়ে পড়েন। সকালের অফিস টাইমে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীর ভিড় উপচে পড়ে। মেট্রো পরিচালন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরাসরি ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা।
এদিন নিউটাউনে চাকরির পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন আমতার তিন বাসিন্দা। তাঁদের একজন নবনীত কুমার বলেন, ‘পৌঁনে ১১টা নাগাদ সেক্টর ফাইভের টিকিট কাটি। এক ঘণ্টারও বেশি সময় অপেক্ষা করলাম। শেষমেশ পরীক্ষাই দেওয়া হল না।’ অফিস যাত্রী সন্দীপ শর্মা, বিবেক দেও, দেবীকা নাথ বলেন, ‘কলকাতা মেট্রোতে এতদিন ভোগান্তির কথা শুনে এসেছি। এবার হাওড়া মেট্রোতেও শুরু হল।’ বারাকপুরে এক বেসরকারি হাসপাতালে ছেলের চোখের চিকিৎসার জন্য যাচ্ছিলেন জগদীশ সরকার। শিয়ালদহ পর্যন্ত যাবেন বলে হাওড়া ময়দান মেট্রো স্টেশনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। শেষে কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে ট্যাক্সি ধরতে বাধ্য হন তিনি। এদিকে মেট্রো বন্ধ থাকায় হাওড়া, শিয়ালদহ, সল্টলেক সহ যাত্রাপথের বিভিন্ন অংশে যাত্রীদের থেকে বেশি ভাড়া হাঁকে অটো, ট্যাক্সি, অ্যাপ ক্যাবগুলি।