বাসন্তী হাইওয়ের ধারে হচ্ছে পুরসভার পরিবেশবান্ধব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র
বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ধাপার মতো আর জঞ্জালের পাহাড় নয়! আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প গড়তে চলেছে কলকাতা পুরসভা। তার জন্য বাসন্তী হাইওয়ের ধারে ৫৩৯ বিঘারও বেশি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে আগেই। জমিটি পুরসভার হলেও সেখানে চাষাবাদ হয় এবং মাছের ভেড়ি রয়েছে। ফলে অনেক মানুষের জীবনজীবিকার প্রশ্নও জড়িয়ে রয়েছে। তাই সংশ্লিষ্ট চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পুরসভা এই ক্ষতিপূরণের অর্থের জন্য প্রায় দেড় বছর আগে নবান্নে ফাইল পাঠিয়েছিল। বিস্তর টালবাহানার পরও সেই অর্থপ্রাপ্তি ঘটেনি। নবান্ন কার্যত হাত তুলে নেওয়ায় অগত্যা পুরসভাকেই অর্থের সংস্থান করতে হয়। ক্ষতিপূরণ দিতে প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা প্রয়োজন। পুজোর আগেই প্রথম দফায় সেই টাকার অন্তত ৫০ শতাংশ মিটিয়ে দিতে চলেছে পুরসভা। সূত্রের খবর, আপাতত ৩৯৭ জন কৃষক ও মৎস্যজীবীর হাতে মোট ১৩ কোটি ২৯ লক্ষ ৩৮ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দেওয়া হবে।
কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, পুরসভার ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডে বাসন্তী হাইওয়ের ধারে খানাবেড়িয়া এবং দুর্গাপুর গ্রাম। সেখানেই চিহ্নিত হয়েছে এই প্রকল্পের জমি। আগেই সেখানকার চাষি ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কয়েক দফায় আলোচনা সেরেছে পুরসভা। সূত্রের খবর, সব মিলিয়ে প্রায় ৮৮৩ জন জমিদাতাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কাঠাপিছু দেওয়া হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। স্থানীয় কাউন্সিলার সন্দীপন সাহা বলেন, ‘পুজোর আগেই প্রথম পর্যায়ে অর্ধেক জমিদাতার হাতে চেক তুলে দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি মেনে প্রত্যেক জমিদাতাই পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন।’ পুর-কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, পরিবেশ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত ‘ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ল্যান্ড ফিল্ড’ আবশ্যিক। সেই মতো পরিবেশবিধি মেনে ধাপায় বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের একাধিক ইউনিট তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ধাপায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ৬০ একর জমি রয়েছে। বেশ কয়েকবছর আগে ২০ একর জমির আবর্জনা ‘বায়ো মাইনিং’ করে খালি করা হয়। সেখানে আর যে কোনও ধরনের আবর্জনা ফেলা যাবে না। ২০১৯-২০ সালে আরও প্রায় ৪০ লক্ষ মেট্রিক টন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্ব একটি সংস্থাকে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে ধাপায় জঞ্জালের চাপ অনেকটা বেড়েছে। কলকাতা ছাড়াও বিধাননগর, এনকেডিএ, নবদিগন্ত, পানিহাটি ও হাওড়ার ময়লা ধাপায় পড়ছে। তাই এই নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত করা আরও জরুরি হয়ে পড়েছে। পুরসভার পরিকল্পনা, এই জমি হাতে পাওয়া গেলে সেখানে সার কারখানা, বিদ্যুৎ প্রকল্প, বায়ো সিএনজি প্লান্ট তৈরি হবে। এক আধিকারিক বলেন, ‘দীর্ঘ টালবাহানার পর ২৫ বছরের প্রয়াস সফল হতে চলেছে। ধাপার আয়ু শেষ হয়ে গিয়েছে। বহু বছর ধরেই আমরা নতুন জায়গা পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছিলাম। ২০২৫ সালের মধ্যেই এই জমি না পেলে বিপাকে পড়তে হতো।’