• গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের কাঁটা তুলতে রাজ্যব্যাপী কথা তৃণমূলের
    আনন্দবাজার | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • রদবদল তো হবে। কিন্তু ভোটের মুখে দুই-তৃতীয়াংশ সাংগঠনিক জেলায় তার ‘পরিণাম’ এড়াতে সংস্কারের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করছে তৃণমূল কংগ্রেস। সাংগঠনিক রদবদলের ফলে যে সব জায়গায় নতুন করে দ্বন্দ্ব তৈরির আশঙ্কা রয়েছে, সেই রকম প্রায় ২০টি অঞ্চল নিয়ে আলাদা করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা ভোটের আগে গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব নির্মূল করতে এই মীমাংসার জন্য ৭ দিন বরাদ্দ করা হয়েছে।

    উৎসবের মরসুম শেষ হলেই পুরোদস্তুর নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ঢুকে যাবে রাজনৈতিক দলগুলি। নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে লোকসভা আসনভিত্তিক সাংগঠনিক জেলাগুলির বৈঠক শেষ হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না তৃণমূল। শেষ দু’টি বড় নির্বাচনের ফল এবং আরও কিছু সাংগঠনিক মাপকাঠির ভিত্তিতে ব্লক ও অঞ্চল স্তরে রদবদলের সিদ্ধান্ত নিলেও গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের কারণেই এই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে দলীয় নেতৃত্বের মধ্যে। সূত্রের খবর, নীচের তলায় যে সাংগঠনিক দায়িত্ব বদলের প্রক্রিয়া চলছে, তা ঘিরেই এই দ্বন্দ্বের আঁচ পেয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই কারণেই বুধবার থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের এই মিলমিশ বৈঠক শুরু করেছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী। বীরভূমের কয়েকটি অঞ্চলের সমস্যা নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। একই ভাবে হুগলির একটি অঞ্চলের সাংসদ ও বিধায়কের বিরোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে ওই সাংসদ এই রকম আলোচনায় বসতে রাজি হননি। পশ্চিমাঞ্চলের এক মন্ত্রীকেও ডেকে তাঁর এলাকা নিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

    ব্লক, টাউন ও অঞ্চল স্তরের এই দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্ট বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় রদবদলের দ্বিতীয় পর্ব হিসেবে সেই ফাঁক বোজাতে নামছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘এই পর্বও নেতৃত্বের ধারণার মধ্যে ছিল। সেই মতোই পরিকল্পনা করা হয়েছে। দীর্ঘ দিন দায়িত্বে থাকা কাউকে সরিয়ে দেওয়া হলে ক্ষোভ, অভিমান হতে পারে। তা দলই দূর করবে।’’

    সাংগঠনিক রদবদলের প্রক্রিয়ার গোড়া থেকেই এই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের বিষয়টি সামনে এসেছে। অভিষেক ও বক্সী এক-দেড় মাস ধরে জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সেগুলিতেও তার ইঙ্গিত ছিল। একাধিক জেলার নেতাদের মধ্যে যে ‘সম্পর্ক’ এই বৈঠকে দেখা গিয়েছে, তাতেই দ্বন্দ্ব মেটাতে বিশেষ উদ্যোগের কথা ভেবেছেন অভিষেক। প্রান্তিক পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বনগাঁ, বসিরহাট হয়ে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, বীরভূম-সহ একাধিক জেলার নেতারা রদবদল নিয়ে যে রকম পরস্পর-বিরোধী প্রস্তাব ও সুপারিশ দিয়েছেন, তাতেই তা স্পষ্ট। দু-একটি জেলার নেতারা বৈঠকে একে অন্যের সঙ্গে বাদানুবাদেও জড়িয়েছেন। এই বিরোধ নীচের তলায় ছড়ালে ভোটে দলের ক্ষতির সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না তৃণমূল। তাই নরমে-গরমে মীমাংসায় নামছেন দলীয় নেতৃত্ব।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)