• চন্দ্রনাথের নগদ লেনদেনে প্রশ্ন
    আনন্দবাজার | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, তাঁর স্ত্রী এবং দুই ছেলের মোট ন’টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ৭০ শতাংশ লেনদেন নগদ টাকাতেই হয়েছিল বলে আদালতে চার্জশিট ও নথিতে দাবি করেছে ইডি। ২০২৪-এ চন্দ্রনাথের বোলপুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার নগদ ৪১ লক্ষ টাকার উৎসও তিনি ঠিকঠাক দেখাতে পারেননি বলে দাবি। প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় মন্ত্রীকে অভিযুক্ত করে বিচার ভবনের সিবিআই বিশেষ আদালতে সম্প্রতি ষষ্ঠ সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমাদিয়েছে ইডি।

    মামলার তদন্তকারী অফিসারের দাবি, ২০১৪ থেকে প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি শুরু হয়েছিল। রাজ্যের প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী বিধায়কদের একাংশ সাব-এজেন্টের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীদের বাঁকা পথে চাকরির ব্যবস্থা করে মাথা পিছু ৮-১০ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন বলে দাবি। তদন্তকারীদের দাবি, ২০১৫-র পর থেকে চন্দ্রনাথের আর্থিক সম্পত্তি রকেটের গতিতে বেড়েছে। ইডির এক কর্তার কথায়, “চন্দ্রনাথের বিরুদ্ধে ওঠা ১২ কোটি ৭২ লক্ষ টাকার দুর্নীতির অভিযোগই নগদ লেনদেনের নানা তথ‍্যেপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।”

    ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ইনকাম ডিসক্লোজার’ প্রকল্পে তিনি দু’কোটি টাকা ঢালেন বলেও দাবি। ওই বছরে নোট-বন্দির সময়ে চন্দ্রনাথ ও তাঁর স্ত্রীর যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে একই দিনে তিন বার ধাপে ধাপে সাত লক্ষ টাকা জমা পড়ার তথ্যও তদন্তকারীদের সূত্রে উঠে এসেছে। অর্থাৎ, নগদ টাকার পুরনো নোট বদল করা চলছিল বলে মনে করা হচ্ছে। চন্দ্রনাথের স্ত্রীর নামে থাকা নির্মাণ সংস্থায় দু’কোটি টাকাও নগদে লগ্নি করা হয় বলে তদন্তকারীদের দাবি। পারিবারিক কৃষিকাজের লেনদেনের আর্থিক নথিও চন্দ্রনাথ পেশ করতে পারেননি বলে তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি উঠে আসছে। রাজ্যের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী সদস‍্য চন্দ্রনাথ এবং তাঁর পরিজনের আয়কর সংক্রান্ত তথ‍্যে অস্বচ্ছতাও তদন্তকারীদের নজরে এসেছে বলে দাবি।

    প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের ফ্ল্যাট থেকে চন্দ্রনাথের সুপারিশ করা ১৫৯ জন অযোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা পাওয়া গিয়েছে বলেও চার্জশিটে ইডির দাবি। তদন্তকারীদের ব‍্যাখ‍্যা, এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে চন্দ্রনাথের ভূমিকা অন্যতম ‘মিডলম্যানে’র বলেই স্পষ্ট হচ্ছে। ইডির কর্তাদের কথায়, “প্রভাবশালী অভিযুক্ত তথা রাজ‍্যের ওই মন্ত্রীর স্ত্রী, দুই ছেলের বয়ান নেওয়ার হলেও টাকার উৎস নিয়ে সদুত্তর মেলেনি। তদন্তের স্বার্থে তাই এ বার চন্দ্রনাথকে হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন। আদালতের সেই মতো আবেদন করা হয়েছে।” চন্দ্রনাথের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন খারিজের আবেদনের শুনানি আগামী শনিবার। আদালতে চত্বরে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে আইনি পথে আদালতে সব জবাব দেওয়ার কথা জানান চন্দ্রনাথ।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)