• ৫০টি অস্ত্রের হিসাব মেলেনি পুরুলিয়ার সেই অস্ত্র বিপণিতে
    আনন্দবাজার | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • পুরুলিয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি অস্ত্র বিপণি থেকে বেআইনি ভাবে গত কয়েক বছর ধরে অস্ত্র কিনেছিল রহড়া অস্ত্র উদ্ধার মামলায় ধৃত অস্ত্রের কারবারি মধুসূদন মুখোপাধ্যায়। সূত্রের দাবি, ২০১৭ সাল থেকে দফায় দফায় পুরুলিয়ার ওই অস্ত্র বিপণি থেকে অস্ত্র এসেছে মধুসূদনের কাছে। প্রথম দফায় চারটি দোনলা বন্দুক বিক্রি করা হয়েছিল অস্ত্র কারবারিদের কাছে। এর পরেও একাধিক বার ওই বিপণি থেকে অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে।

    এক পুলিশকর্তার দাবি, ভুয়ো লাইসেন্স তৈরি করে ওই বিপণি থেকে মাওবাদী ও বিভিন্ন অস্ত্র কারবারিকে অস্ত্র বিক্রি করা হয়েছে। পুরুলিয়ার ওই বিপণি সিল করার আগে সেখানে মজুত অস্ত্রের হিসাব মিলিয়ে দেখা হয়। তাতেই দেখা যায়, প্রায় ৫০টি অস্ত্রের কোনও নথি কর্তৃপক্ষের কাছে নেই। রেজিস্টারে ওই সব অস্ত্রের কথা থাকলেও বাস্তবে সেগুলির সন্ধান মেলেনি। এমনকি, ওই দোকানে কত অস্ত্র বা কার্তুজ রয়েছে, তারও হিসাব নেই। উল্লেখ্য, অতীতে ওই দোকান থেকে মাওবাদীদের কাছে অস্ত্র গিয়েছিল বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। এমনকি, বি বা দী বাগের প্রাচীন অস্ত্র বিপণি থেকেও বেআইনি ভাবে অস্ত্র কিনেছিল পুরুলিয়ার ওই বিপণি কর্তৃপক্ষ। মূলত বিভিন্ন জায়গা থেকে অস্ত্র কেনার পরে সেগুলির ভুয়ো শংসাপত্র তৈরি করা হত। তার পরে অস্ত্রগুলি বিক্রি করে দিত পুরুলিয়ার ওই বিপণির কর্মীরা।

    প্রসঙ্গত, গত মাসে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা রহড়ার একটি আবাসনের ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে এক হাজার রাউন্ড গুলি ও ১৫টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেন। গ্রেফতার করা হয় মধুসূদন মুখোপাধ্যায় নামে এক অস্ত্র কারবারিকে। পরে ঘটনার তদন্তভার নেয় এসটিএফ। জানা যায়, মধুসূদনের অস্ত্র ও কার্তুজের ভান্ডারের সিংহভাগই এসেছিল বি বা দী বাগের একটি বিপণি থেকে। সেই সঙ্গে, অস্ত্রের জোগান দিয়েছিল পুরুলিয়ার একটি অস্ত্র বিপণিও। বিষয়টি জানার পরেই মঙ্গলবার তদন্তকারীরা পুরুলিয়ার দশের বাঁধ মোড়ের ওই বিপণিতে হানা দেন এবং ওই বিপণির মালিকের ঘনিষ্ঠ শেখ মনুকে গ্রেফতার করে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ। ধৃতকে বুধবার ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ন’দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। সূত্রের খবর, মালিকের মৃত্যুর পরে পুরুলিয়ার ওই দোকানের লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। ফলে, দোকান বন্ধ ছিল। তদন্তকারীদের দাবি, বন্ধ দোকান থেকে বেআইনি ভাবে মধুসূদনের কাছে অস্ত্র পাচার করত শেখ মনু।

    ধৃত মনুর বিরুদ্ধে অস্ত্রের কারবার ছাড়াও খুন, ছিনতাই, ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে। ওই সব মামলায় ৬৮ বছরের মনু প্রায় ২২ বছর কয়েক দফায় জেল খেটে কিছু দিন আগে ছাড়া পায়। তার পরেই পুরুলিয়ার ওই অস্ত্র বিপণির মালিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরে সেটির দায়িত্ব নেয় মনু। তদন্তকারীরা জানান, ধৃত মনু ও মধুসূদনকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করা হবে। তা হলেই বোঝা যাবে, তাদের মধ্যে কত অস্ত্রের লেনদেন হয়েছে। পুরুলিয়ার ওই বিপণির মালকিন ও তাঁর অন্য এক কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে কলকাতায়। তাঁদের দোকানের সমস্ত মজুত অস্ত্রের হিসাব নিয়ে আসতে বলা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)