বেঢপ উঁচু স্পিড ব্রেকারে বিপাকে গাড়ি, দুর্ঘটনার আশঙ্কা নিউ টাউনে
আনন্দবাজার | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আচমকা সামনে এসে পড়েছে স্পিড ব্রেকার। দূর থেকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসা গাড়ির চালক বুঝতে পেরেছিলেন, আচমকা ব্রেক কষলে গাড়ি নিয়ে উড়ে গিয়ে তিনি ছিটকে পড়বেন। তাই ওই গতিতেই পাঁচটি স্পিড ব্রেকার একসঙ্গে টপকে গেলেন বিপজ্জনক ভাবে। সেই শব্দ পেয়ে হতচকিত রাস্তার লোকজন। এমনই দৃশ্য দেখা গেল নিউ টাউনে সদ্য তৈরি হওয়া একটি রাস্তায়। সেই রাস্তাটি বিশ্ব বাংলা গেটের দিক থেকে মহিষবাথানের দিকে গিয়েছে।
এ ক্ষেত্রে অবশ্য রাস্তার ওই স্পিড ব্রেকারগুলিকেই দোষারোপ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভবিষ্যতে ওই রাস্তাটিকে নিউ টাউন থেকে পাঁচ নম্বর সেক্টরের পাশ দিয়ে নিয়ে গিয়ে ই এম বাইপাসের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। হাইওয়ের মতো করে রাস্তাটি ছ’লেনের করা হয়েছে। গাড়ির গতি বেঁধে দেওয়া হয়েছে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই রাস্তায় মোটরবাইকের ধাক্কায় এক পথচারীর মৃত্যুর পরে দুর্ঘটনাস্থল ও তার উল্টো দিকের রাস্তায় পাঁচটি করে স্পিড ব্রেকার বসিয়েছে হিডকো। কিন্তু সেগুলি এতটাই উঁচু যে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গাড়ি এক বারে পেরোতে পারছে না। বুধবার দুপুরে তেমন দৃশ্য চোখেও পড়ল।
দেখা গেল, স্পিড ব্রেকারের মাঝে আটকে পড়ছে গাড়ির চাকা। যার জেরে একটি গাড়ির পিছনে দাঁড়িয়ে পড়ছে অন্য গাড়ি। ফলে, অল্প সময়ের মধ্যেই গাড়ির জট তৈরি হয়ে যাচ্ছে সেখানে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দিনকয়েক আগেও একটি গাড়ি সন্ধ্যা নাগাদ স্পিড ব্রেকারের সামনে পৌঁছে আচমকা ব্রেক কষে। যার জেরে পরের পর বেশ কয়েকটি গাড়ির মধ্যে ধাক্কা লাগে। এ দিন দুপুরে ওই রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখা গেল, বাইকচালকেরা অত উঁচু স্পিড ব্রেকার পেরোতে গিয়ে বাইকের উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন না। এর আগে দু’-এক জন মহিলা ওই ভাবে চালাতে গিয়ে বাইক বা স্কুটার থেকে পড়ে গিয়েছেন বলেও শোনা গেল।
নিউ টাউনের বাসিন্দাদের সংগঠন ‘নিউ টাউন সিটিজ়েন্স ওয়েলফেয়ার ফ্রেটারনিটি’র সম্পাদক সমীর গুপ্তের অভিযোগ, ‘‘স্থানীয় লোকজন স্পিড ব্রেকার নিয়ে খানিকটা সতর্ক হতে পেরেছেন। কিন্তু অন্য এলাকার গাড়িচালকেরা এখনও সমস্যায় পড়ছেন। দ্রুত গতিতে চলার পথে আচমকাই সামনে স্পিড ব্রেকার দেখে থেমে যাচ্ছেন তাঁরা। তাতে পিছনের গাড়ির সঙ্গে ধাক্কা লাগার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এর জেরে সার্ভিস রোডে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।’’ এ দিন দুপুরে দেখা গেল, ওই রাস্তার দু’দিকের সার্ভিস রোডেই দুই অভিমুখে গাড়ি চলছে। রাস্তায় কোনও বিভাজন রেখা নেই। চোখে পড়েনি স্পিড ব্রেকার নিয়ে সতর্কবার্তার কোনও বোর্ডও।
রাস্তার এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির খবর রয়েছে বিধাননগর কমিশনারেট, হিডকো এবং এনকেডিএ-র কাছেও। বিধাননগর ট্র্যাফিক পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, এ দিন হিডকো এবং এনকেডিএ-কে সঙ্গে নিয়ে ওই রাস্তা পরিদর্শন করা হয়েছে। শীঘ্রই স্পিড ব্রেকার নিয়ে সাইনেজ বসানো হবে। স্পিড ব্রেকারের উচ্চতাও কমিয়ে দেওয়া হবে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘বাইক দুর্ঘটনায় পথচারীর মৃত্যুর পরে স্থানীয়েরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি মেনেই স্পিড ব্রেকারগুলি বসানো হয়েছে। সেগুলির উচ্চতা কমানো হবে। ওই রাস্তায় আন্ডারপাস তৈরির পরিকল্পনাও হচ্ছে।’’ এ দিন বিশ্ব বাংলা সরণিও পরিদর্শন করেন আধিকারিকেরা। সেখানেও একাধিক আন্ডারপাসের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে খবর। হিডকো সূত্রের খবর, কিছু প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন নিউ টাউনের বেশ কিছু রাস্তা পরিদর্শন করেছেন সংস্থার কর্তারা।