দুর্ভোগ কমছেই না! ২৪ ঘণ্টা পর ফের মেঘভাঙা বৃষ্টি, তলিয়ে গেল পরপর বাড়ি, উত্তরাখণ্ডে নিখোঁজ ১০
আজকাল | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: ২৪ ঘণ্টা পর আবারও মেঘভাঙা বৃষ্টিতে তছনছ উত্তরাখণ্ড। দেরাদুনের পর এবার বিধ্বস্ত উত্তরাখণ্ডের চামোলি। বুধবার ভোররাতে প্রবল বৃষ্টির জেরে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানে তছনছ চামোলির একাংশ। তলিয়ে গেছে বহু বাড়িও। এখনও পর্যন্ত দশজন নিখোঁজ বলে জানা গেছে।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বুধবার ভোররাতে নন্দন নগর পঞ্চায়েতের একটি ওয়ার্ড পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছ'টি বাড়ি পুরোপুরি ধসে পড়েছে। পাশাপাশি প্রচুর বাড়ি, হোটেল, দোকান, জমি ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। প্রশাসনের তরফে জানা গেছে, এদিনের মেঘভাঙা বৃষ্টির পর দশজন এখনও পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। দু'জনকে উদ্ধার করা গেছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি লিখেছেন, 'ভারী বৃষ্টির জেরে চামোলি জেলার নন্দনগর নগর ঘাট এলাকার বহু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তারা, পুলিশ ও উদ্ধারকারী দল ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই।'
মঙ্গলবার ভোররাতের মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের জেরে শুধুমাত্র দেরাদুনেই ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আটজন উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। উত্তরাখণ্ড জুড়ে মোট আরও অনেকের মৃত্যু হয়েছে সেদিনের ভারী বৃষ্টিতে। নৈনিতালে একজনের এবং উধম সিং নগরে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এখনও পর্যন্ত ১৭ জন নিখোঁজ রয়েছেন। পাহাড়ি শহরের বিভিন্ন জায়গায় কমপক্ষে ২৫০০ পর্যটক আটকে রয়েছেন।
প্রবল বর্ষণ, মেঘভাঙা আর ভূমিধসে এই বছরের বর্ষায় ইতিমধ্যেই উত্তরাখণ্ডের একাধিক এলাকা বিপর্যস্ত। উত্তরকাশীর ধরালি-হরশিল, চামোলির থারালি, রুদ্রপ্রয়াগের চেনাগাড়, পাউরির সেঁজি, বাগেশ্বরের কাপকোট ও নৈনিতালের একাধিক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই বছরের এপ্রিল থেকে উত্তরাখণ্ডে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন ১২৮ জন এবং নিখোঁজ রয়েছেন ৯৪ জন। এর আগে, গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তরাখণ্ড সফরে দেরাদুনে এসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ পর্যালোচনা করেন। তিনি বিপর্যস্ত অঞ্চলের জন্য ১,২০০ কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেন।
উত্তরকাশীর ধারালি গ্রামে আগস্ট মাসের শুরুতেই পরপর প্রবল মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বান, বিশাল ভূমিধসের ঘটনাটি ঘটেছে। জানা গিয়েছে, এই ঘটনার জেরে প্রাথমিকভাবে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিখোঁজ ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, এই ভয়াবহ দুর্যোগে গঙ্গোত্রী ধামের সঙ্গে সমস্ত রাস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘটনাস্থলের খুব কাছেই অবস্থিত গঙ্গার শীতকালীন আসন মুখবা ও পবিত্র গঙ্গোত্রী ধাম। পর্যটকদের তোলা ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পাহাড় থেকে নেমে আসা জলপ্রবাহ ধেয়ে আসছে নিচের দিকে, একের পর এক বাড়ি ও গাছপালা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হরশিল অঞ্চলের খীর গাধ নালার উপচে পড়া জলের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
নিমেষে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় গোটা গ্রাম। বাড়ি, হোটেল, হোমস্টে, রেঁস্তোরা, দোকানপাট, আর কিছুরই নেই চিহ্ন। এই উত্তরকাশীতে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরেই মৃত্যুমিছিল বাড়ছে। আরও বাড়ল মৃতের সংখ্যা। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ। নিখোঁজের সংখ্যাও শতাধিক ছিল। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছিল, হড়পা বানে তলিয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি বাসিন্দা নিখোঁজ রয়েছেন। এর মধ্যে সেনা বাহিনীর ১১ জন জওয়ান নিখোঁজ রয়েছেন।