• মোদির জন্মদিনে স্বচ্ছতা অভিযানে ‘আবর্জনা ফেলে সাফাই’ করার নাটক, বিজেপি বিপাকে...
    আজকাল | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভরুচ জেলার অমোদ পৌরসভা ঘিরে মঙ্গলবার বড়সড় বিতর্কের জন্ম দিল এক ভাইরাল ভিডিও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে শুরু হওয়া ১৫ দিনের ‘স্বচ্ছতা হি সেবা (SHS)’ কর্মসূচির প্রথম দিনেই এই ঘটনা ঘটে। ভিডিওতে দেখা যায়, অমোদ পৌরসভার সভাপতি জল্পা প্যাটেল ও প্রধান আধিকারিক পঙ্কজ নায়ক নির্দিষ্ট মাঠে পৌঁছেই কর্মীদের হাতে ঝাড়ু চাইছেন। এরই মধ্যে এক সাফাইকর্মী ডাস্টবিন থেকে আবর্জনা বের করে নির্দিষ্ট পথের উপর ছড়িয়ে দেন। এরপর প্যাটেল ও নায়কের হাতে ঝাড়ু তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু ক্যামেরার উপস্থিতি টের পেতেই দু’জনকেই দ্বিধায় পড়তে দেখা যায়। প্যাটেলকে একসময় পিছিয়ে যেতে দেখা যায়, আর নায়ক তাঁর পিছু নেন ঝাড়ু হাতে নিয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকালেই সাফাইকর্মীরা মাঠ পরিষ্কার করেছিলেন। ফলে কর্মসূচির সময় ঝাঁট দেওয়ার মতো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। সেই কারণেই ইচ্ছাকৃতভাবে মাটি নোংরা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

    এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে। ভরুচ যুব কংগ্রেসের নেতা কেতন মাকওয়ানা বলেন, “এটা একেবারেই প্রহসন। সাধারণ মানুষ যখন নোংরা পরিবেশে ভুগছে, মশাবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে, তখন পৌরসভা ও বিজেপি নেতারা জনগণের সমস্যার সমাধান না করে ফটোসেশনের রাজনীতি করছে। এর জন্য জল্পা প্যাটেলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।” অন্যদিকে কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজ্যে বহু জায়গায় স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাব প্রকট। ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া সহ নানান ভেক্টর-বোর্ন রোগের প্রকোপ বেড়ে চলেছে। অথচ পৌরসভা ও শাসকদলের নেতারা শুধুই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ব্যস্ত।

    অখিল ভারতীয় সাফাই মজদুর সংঘের অমোদ শাখার নেতা হীরাভাই সোলাঙ্কি জানান, ঘটনায় যিনি আবর্জনা ফেলেছিলেন তিনি আদেশ অমান্য করতে পারেননি।  “আমরা নিচু শ্রেণির কর্মী। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানা ছাড়া উপায় নেই। চাকরি বাঁচাতে বাধ্য হয়ে আবর্জনা ফেলতে হয়েছে। না মানলে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি চলে যেত।” এই মন্তব্যে নতুন প্রশ্ন উঠেছে—নিচু স্তরের কর্মীদের কীভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে।

    ভরুচ জেলা বিজেপি সভাপতি প্রকাশ মোদী স্বীকার করেছেন যে ভিডিও তিনি ব্যক্তিগতভাবে বহুজনের কাছ থেকে পেয়েছেন। তিনি বলেন, “রাজ্য নির্বাহী সভায় বিষয়টি আলোচনা হবে। দলের পক্ষ থেকে কাউকে নাটক সাজাতে বলা হয়নি। প্রত্যেককে প্রকৃত পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে বলা হয়েছে। যদি কোনও নেতা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে ভুল করে থাকেন, তার দায়ভার তাকেই নিতে হবে।” তিনি আরও জানান, স্বচ্ছতা অভিযান প্রতিবছর ১৭ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ২ অক্টোবর শেষ হয়। এর উদ্দেশ্য হল জনগণের মধ্যে সচেতনতা ছড়ানো, ক্যামেরার সামনে দেখানোর জন্য কাজ নয়।

    ঘটনার পর থেকে অমোদসহ সমগ্র ভরুচ জেলায় আলোড়ন পড়েছে। সাধারণ মানুষও ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য—“নেতাদের ছবি তোলার জন্য সাফাইকর্মীদের দিয়ে মাটি নোংরা করানো মানে সরকারের স্বচ্ছতা মিশনকে তামাশায় পরিণত করা।” রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই ঘটনার ফলে বিজেপির ভাবমূর্তি বড়সড় ধাক্কা খেল। স্বচ্ছ ভারত অভিযান নিয়ে মোদির দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। স্থানীয় নেতৃত্বের এমন আচরণ বিরোধীদের হাতে রাজনৈতিক হাতিয়ার তুলে দিল।

    অমোদের ঘটনায় স্পষ্ট যে কেন্দ্র বা রাজ্য নেতৃত্ব পরিচ্ছন্নতা অভিযানের আন্তরিক প্রচেষ্টা জারি রাখলেও স্থানীয় স্তরে তা অনেক সময় শুধুই আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জনগণের সমস্যা সমাধান না করে যদি ফটোশুটের রাজনীতি হয়, তবে তা শুধু শাসকদলের ভাবমূর্তিই নয়, সরকারের প্রকৃত কর্মদক্ষতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে। এখন দেখার বিষয়, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব জল্পা প্যাটেল ও পৌর আধিকারিক পঙ্কজ নায়কের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেয়।
  • Link to this news (আজকাল)