• গোদাবাই, সূর্যকান্ত, নাগরাজ...
    আজকাল | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে—এমনই তীব্র অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশন এবং মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (CEC) গ্যনেশ কুমারের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ শানালেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) এক সাংবাদিক বৈঠকে রাহুল অভিযোগ করেন, কর্নাটকের আলন্দ বিধানসভা আসনে পরিকল্পিতভাবে ভোটার তালিকা থেকে ৬,০১৮ জনের নাম মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। তাঁর দাবি, এই কাজটি হচ্ছে কেন্দ্রীভূত সফটওয়্যার ব্যবহার করে এবং কর্নাটকের বাইরের ফোন নম্বর থেকে, যাতে দলিত, আদিবাসী এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের সরিয়ে কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্ক দুর্বল করা যায়।

    রাহুল গান্ধী এর আগেও ভোট চুরির অভিযোগ তুলেছিলেন। গত মাসে তিনি তথ্য দিয়ে দাবি করেছিলেন, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে কর্নাটকের মহাদেবপুরা আসনে এক লক্ষেরও বেশি ভোট জালিয়াতির মাধ্যমে ‘চুরি’ করা হয়েছে। তাঁর ভাষায়, “ভোট চুরি মানে গণতন্ত্রের উপর পরমাণু বোমা ফেলা।”

    কর্ণাটক সিআইডির তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে, ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটের আগে আলন্দে ৫,৯৯৪ জন ভোটারের নাম জাল ফর্ম-৭ ব্যবহার করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। সেই প্রসঙ্গেই রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার আরও বিস্তারিত প্রমাণ সামনে আনেন। তিনি তিনটি উদাহরণ তুলে ধরেন—

    ১. গোদাবাই কাণ্ড: আলন্দের ৬৩ বছর বয়সী এক বাসিন্দা গোদাবাইয়ের নামে ভুয়ো লগইন তৈরি করা হয়। সেই ভুয়ো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তাঁর ১২ জন প্রতিবেশীর নাম ভোটার তালিকা থেকে মুছে দেওয়ার আবেদন জমা পড়ে। রাহুল অভিযোগ করেন, গোদাবাই নিজে কিছুই জানতেন না। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি ওই মহিলার ভিডিও-বার্তাও দেখান।

    ২. সূর্যকান্ত কাণ্ড: আরেক ব্যক্তি সূর্যকান্ত নাকি মাত্র ১৪ মিনিটে ১২টি ভোটার মুছে দেওয়ার আবেদন জমা দেন। এর মধ্যে বাবিতা চৌধুরী নামের এক মহিলার নামও বাদ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল।

    ৩. নাগরাজ কাণ্ড: নাগরাজ নামের এক ব্যক্তি মাত্র ৩৬ সেকেন্ডে দুটি ফর্ম জমা দেন। আরও অবাক করার মতো ঘটনা হল, আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময় ধরা পড়ে রাত ৪টা ০৭ মিনিটে। রাহুলের মন্তব্য—“আপনি নিজে চেষ্টা করে দেখুন, একটি ফর্ম পূরণ করতে কত সময় লাগে। হাতে লিখে বা সাধারণ প্রক্রিয়ায় এটি করা অসম্ভব। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফর্ম জমা হয়েছে।”

    রাহুল আরও দাবি করেন, এই প্রক্রিয়া শুধুমাত্র কর্নাটকেই নয়, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশেও হয়েছে। সর্বত্র লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে সংখ্যালঘু, দলিত এবং কংগ্রেস সমর্থক ভোটারদের। তাঁর অভিযোগ, ভোট মুছে দেওয়ার সর্বাধিক চেষ্টা হয়েছে সেই বুথগুলোতে, যেখানে কংগ্রেস শক্ত অবস্থানে ছিল। ২০১৮ সালে ওই বুথগুলির মধ্যে ১০টির মধ্যে ৮টিতে কংগ্রেস জিতেছিল।

    নির্বাচন কমিশন প্রতিক্রিয়া দিয়েছে  ইতিমধ্যেই। রাহুল গান্ধীর বিস্ফোরক অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, এই সমস্ত অভিযোগ “ভিত্তিহীন”। কমিশনের দাবি, কোনও সাধারণ ব্যক্তি অনলাইনে ভোটারের নাম মুছতে পারেন না, তাই রাহুলের কথায় কোনও সত্যতা নেই। তবে বিরোধী শিবিরের মতে, ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার এই পদ্ধতি ভারতীয় গণতন্ত্রকে বিপজ্জনক পথে ঠেলে দিচ্ছে। রাহুল গান্ধীর ভাষায়, “এটি একটি কেন্দ্রীভূত ষড়যন্ত্র। সফটওয়্যারের মাধ্যমে কংগ্রেস সমর্থক ভোটারদের বাদ দেওয়া হচ্ছে।” কর্ণাটক থেকে শুরু হওয়া এই বিতর্ক ইতিমধ্যেই জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলেছে। এখন দেখার, এই ইস্যুতে ভবিষ্যতে কমিশন বা কেন্দ্র সরকার কী অবস্থান নেয়।
  • Link to this news (আজকাল)