• মার্কিন শুল্ক দ্রুত প্রত্যাহার হতে পারে! কেন এমন কথা বললেন ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা...
    আজকাল | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি. আনন্দ নাগেশ্বরন বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, খুব শীঘ্রই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের রপ্তানিপণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত দণ্ডমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করবে এবং পাল্টা শুল্কও কিছুটা শিথিল হতে পারে। এর ফলে রপ্তানিকারকদের জন্য যে চাপ তৈরি হয়েছে, তাতে কিছুটা স্বস্তি মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    নাগেশ্বরন জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগস্ট মাসে ভারতের কিছু রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ দণ্ডমূলক শুল্ক আরোপ করেছিল। তবে সেটি নভেম্বরের শেষ নাগাদই প্রত্যাহার হতে পারে। তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ৩০ নভেম্বরের পর দণ্ডমূলক শুল্ক বহাল থাকবে না। এটি কোনও আনুষ্ঠানিক ইঙ্গিত বা নিশ্চয়তার ওপর ভিত্তি করে বলা নয়, বরং সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিচার করে আমার ব্যক্তিগত আশা। আগামী দুই মাসের মধ্যেই এই শুল্ক সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি। তাতে দণ্ডমূলক শুল্ক প্রত্যাহার হবে, পাশাপাশি পাল্টা শুল্কও কিছুটা কমতে পারে।”

    সিইএ-এর মতে, এই আলোচনার অগ্রগতি হলে সেটি ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে নামানো যেতে পারে। তিনি আরও জানান, সামগ্রিকভাবে ভারত-আমেরিকা শুল্ক বিরোধ আগামী ৮–১০ সপ্তাহের মধ্যে মীমাংসিত হতে পারে। যদিও এটিকে তিনি ব্যক্তিগত মূল্যায়ন হিসেবেই বর্ণনা করেন, কোনও আনুষ্ঠানিক দিক দিয়ে নয়।

    নাগেশ্বরনের এই মন্তব্য এসেছে মাত্র কয়েক দিন পর, যখন ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সচিব তথা প্রধান বাণিজ্য আলোচক রাজেশ আগরওয়াল দিল্লিতে বৈঠক করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চের সঙ্গে। ট্রাম্প প্রশাসন গত মাসে ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পর এটিই ছিল দুই দেশের আলোচকদের মধ্যে প্রথম সরাসরি বৈঠক। ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অব্যাহত জ্বালানি বাণিজ্যই নতুন করে এই কঠোর শুল্ক নীতির কারণ।

    বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সমস্যা আরও জটিল হয়েছে। দ্বিস্তরীয় শুল্ক ব্যবস্থার কারণে অনেক পণ্যের ওপর মোট করভার দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। বিশেষ করে টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য এবং কিছু খাদ্যপণ্য– এই ধরনের শ্রমনির্ভর খাতগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তাদের মুনাফা কমে গেছে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, আংশিক শুল্ক প্রত্যাহারও খরচের চাপ হ্রাস করবে এবং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক ফের একবার আগের পরিস্থিতি লাভ করবে। 

    যদিও ভারত কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজতে চাইছে। দিল্লির কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এপ্রসঙ্গে নাগেশ্বরন বলেন, সরকার আশাবাদী, তবে সম্ভাব্য একাধিক পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

    এখন সবার চোখ থাকবে নভেম্বরের শেষ নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আদৌ দণ্ডমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে কি না, এবং ভারতীয় পাল্টা শুল্ক ১০–১৫ শতাংশে নামানো সম্ভব হয় কি না, সেদিকে। ততদিন পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে অনিশ্চয়তার ছায়া থেকেই যাবে।
  • Link to this news (আজকাল)