সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: আদিবাসী তালিকাভুক্ত করার দাবি জানিয়ে ফের একবার আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করেছে কুড়মিরা। পুজোর মুখে অনির্দিষ্টকালীন রেল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কর্মসূচির আগেই চাপে সংগঠন। বৃহস্পতিবার, আদিবাসী কুড়মি সমাজের এই রেল ও সড়ক অবরোধকে অসাংবিধানিক বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সুজয় পাল এবং বিচারপতি স্মিতা দাস দের ডিভিশন বেঞ্চ। আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়েছে, অবরোধ গণতান্ত্রিক অধিকার নয়।
কুড়মিদের ২০ তারিখের আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা হয় কলকাতা হাই কোর্টে। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই এই রায় দিয়েছে আদালত। আদালতের নির্দেশের পরে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আদেশনামা এখনও হাতে পাইনি। তবে আমাদের কাছে যা খবর এসেছে তাতে ওই অবরোধকে আবার অসাংবিধানিক বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে এর প্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছে।” অন্যদিকে, আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো জানিয়েছেন, “মৌলিক অধিকারের জন্য আমরা জীবন দিতে প্রস্তুত।” জানা গিয়েছে হাই কোর্টের নির্দেশ স্বত্ত্বেও আগামি ২০ তারিখ এই কর্মসূচি থেকে পিছু হঠছে না কুড়মিরা। অবরোধ সামলানোর জন্য রেল, রাজ্য পুলিশ ও জনপ্রতিনিধি পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বেলা ১২.৩০ মিনিট নাগাদ পুরুলিয়ার বেলগুমা পুলিশ লাইনে হওয়ার কথা এই বৈঠক।
২০ সেপ্টেম্বর সকাল ৬টা থেকে এই অনির্দিষ্টকালীন রেল টেকা ও ডহর ছেঁকা আন্দোলনে নামছেন তাঁরা। কুড়মি সমাজ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলা, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা মিলিয়ে তিন রাজ্যের রেল ও সড়ক অবরোধ হবে ১০০টি পয়েন্টে । তার মধ্যে জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম-মেদিনীপুর এলাকায় রেল ও সড়ক অবরোধের পয়েন্ট রয়েছে প্রায় ৪৫ টি। পুরুলিয়াতেই সবচেয়ে বেশি ৪০টি। এই কর্মসূচি তাঁরা সফল করার জন্য বিভিন্ন স্টেশনে স্টেশন ম্যানেজারকে লিখিত আকারে জানিয়েছেন। যে যে যায়গায় অবরোধ হওয়ার কথা রয়েছে তাঁর মধ্যে পুরুলিয়ায় রয়েছে, আদ্রা, ইন্দ্রবিল, জয়চন্ডী, রামকানালি, মুরাড্ডি, শাঁকা, রুকনি, সাঁওতালডিহি, গড়ধ্রুবেশ্বর, আনাড়া, বাগালিয়া, কুস্তাউর, পুরুলিয়া, টামনা, কান্টাডি, উরমা, বরাভূম, বিরামডি, গৌরীনাথধাম, বারবিন্দা, কোটশিলা, ঝালদা, তুলিন, ইলু, সুইসা, ডামরুঘুটু, পুনদাগ, রাধাগাঁও। এর পাশাপাশি ঝাড়গ্রামে রয়েছে, লাইকুন্ডা, সরডিহা, ঝাড়গ্রাম। মেদিনিপুরের নিমপুরা, খেমাশুলি, মেদিনীপুর, গোদা পিয়াশোল, ভাদুতলা, শালবনী, চন্দ্রকোনা রোডে অবরোধের কথা জানানো হয়েছে।
আদিবাসী তালিকাভুক্তের দাবিতে আদিবাসী কুড়মি সমাজ প্রায় ২০১৫-১৬ আর্থিক বছর থেকেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। পুজোর মুখে সড়ক অবরোধের কর্মসূচি চলছে বেশ কয়েকবছর ধরে। ২০২২ সালে টানা ৫ দিন রেল অবরোধ হয়েছিল। সেই সঙ্গে ৩ দিন চলেছিল সড়ক অবরোধও। ২০২৩-এ কলকাতা হাই কোর্ট এই আন্দোলনকে অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক বলায় তাঁরা বাধ্য হন আন্দোলন প্রত্যাহার করতে।