রাহুল গান্ধীর ‘ভোট চুরি’ অভিযোগে নতুন মোড়, নাম করেই নির্বাচন কমিশনকে নিশানা
আজকাল | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভায় বিরোধী দলনেতা কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বৃহস্পতিবার দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তাঁর বহু আলোচিত ‘ভোট চুরি’ অভিযোগকে আরও জোরালো করলেন। সঙ্গে ছিল তথ্যচিত্রভিত্তিক একটি উপস্থাপনা, যেখানে তিনি দেখানোর চেষ্টা করলেন কীভাবে সফটওয়্যারের কারসাজি ও ভুয়ো আবেদনপত্রের মাধ্যমে ভোটার তালিকা থেকে নাম কেটে ফেলা হচ্ছে।রাহুলের দাবি, এই ধরনের কারচুপির প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল কর্ণাটকের আলন্দ বিধানসভা কেন্দ্র। তিনি অভিযোগ করেন, ২০২৩ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে ৬,০১৮টি ভোট মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। তাঁর কথায়, “আলন্দ একটি বিধানসভা কেন্দ্র। এখানে ৬,০১৮ ভোট মুছে ফেলার চেষ্টা হয়। প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি, কিন্তু কাকতালীয়ভাবে এই অংশটি ধরা পড়ে।”
তিনি জানান, এই অনিয়ম ধরা পড়ে এক বুথ-স্তরের কর্মীর মাধ্যমে। ওই কর্মীর নিজের কাকার নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়। তখন তিনি অনুসন্ধান করে দেখেন, তার নাম নাকি পাশের বাড়ির প্রতিবেশী মুছে দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবেশী পরে জানান, তিনি কিছুই জানেন না। রাহুলের অভিযোগ, এতে স্পষ্ট যে অন্য কোনো “অদৃশ্য শক্তি” পুরো প্রক্রিয়াকে হাইজ্যাক করে ভোট কেটে দিয়েছে।
বিজেপিকে আক্রমণ শানাতে গিয়ে রাহুল নির্বাচন কমিশনের প্রধানকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করান। তিনি অভিযোগ করেন, “আমি এটা হালকাভাবে বলছি না, লোকসভার বিরোধী দলনেতা হিসেবে বলছি ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ভোট চোরদের আড়াল করছেন। এটাই সরাসরি প্রমাণ, এখানে কোনও ধোঁয়াশা নেই।”
কংগ্রেস নেতার কথায়, এই ধরনের ভোট কাটা বা ‘ভোট চুরি’র ঘটনা শুধু গণতন্ত্রকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, সাধারণ মানুষের ভোটাধিকারও কেড়ে নিচ্ছে। তিনি বলেন, যাদের নাম মুছে ফেলা হয়েছে, তারা জানতেও পারেননি। আবার যারা ভোট কেটেছেন বলে তালিকায় দেখানো হয়েছে, তারাও কোনও কাজ করেননি। ফলে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, গোটা ব্যবস্থাই সফটওয়্যার-নির্ভর ভুয়ো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিকৃত করা হচ্ছে।
এর আগেও রাহুল গান্ধী তাঁর ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ শেষ করে ঘোষণা করেছিলেন, খুব শিগগিরই কংগ্রেস দল “ভোট চুরি”-র অকাট্য প্রমাণ তুলে ধরবে। তিনি তখন একে ‘হাইড্রোজেন বোমা’ আখ্যা দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবারের সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, আজকের এই উপস্থাপনা এখনও সেই “বোমা” নয়, তবে শীঘ্রই আরও বড় প্রমাণ সামনে আসবে।
বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনকে একযোগে আক্রমণ করে রাহুলের দাবি, এভাবে গণতন্ত্রের ভিত্তিকেই ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেস এই ইস্যুকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে এবং দেশবাসীকে বোঝাবে তাদের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য কড়া লড়াই জরুরি।
কংগ্রেস সূত্রে খবর খুব তাড়াতাড়ি একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে যেখানে শুধু আলন্দ নয়, দেশের আরও বিভিন্ন অঞ্চলের ভোট কারচুপির উদাহরণ সামনে আনা হবে।
রাহুলের এদিনের অভিযোগ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কংগ্রেস যেখানে দাবি করছে, এটি শুধু একটি ‘নমুনা কেস’, সেখানে বিজেপি শিবির পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে যে বিরোধীরা হারের অজুহাত হিসেবে ভোট চুরির গল্প সাজাচ্ছে। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট ভোটার তালিকা সংক্রান্ত এই নতুন আক্রমণে নির্বাচন কমিশন এবং বিজেপিকে নিয়ে আগামী দিনে রাজনীতির উত্তাপ আরও বাড়তে চলেছে।