জ্বর কমাতে কাজ করছে না প্যারাসিটামল? কোন পরামর্শ দিলেন চিকিৎসকরা
আজকাল | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: গুরগাঁওয়ের ৩৬ বছর বয়সি আইটি পরামর্শদাতা নীরজ চলতি মাসের শুরুতে হঠাৎই জ্বরে আক্রান্ত হন। শরীরের তাপমাত্রা ওঠে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটে। চিকিৎসকরা তাঁকে প্রতিদিন তিনবার করে পাঁচ দিন ডলো–৬৫০ খেতে বলেন। কিন্তু দুই দিন কেটে গেলেও জ্বরের কোনও হেরফের হল না।
তৃতীয় দিনে তাঁকে ব্যথা কমানোর জন্য একটি অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়া হয় ডলোর সঙ্গে। তারপরই চতুর্থ দিন থেকে জ্বর নামতে শুরু করে। নীরজের মতোই দেশের বিভিন্ন হাসপাতাল এখন এমন রোগীর ভিড়ে ভরে উঠছে, যাদের জ্বর প্যারাসিটামল বা তার জনপ্রিয় ব্র্যান্ড নাম ডলো–৬৫০ এ সহজে কমছে না।
চিকিৎসকদের মতে, সমস্যা মূলত ওষুধের অকার্যকারিতায় নয় বরং সংক্রমণের প্রকৃতি ও রোগীর অভ্যাসে। চলতি বছরের ভাইরাল সংক্রমণ অনেক বেশি তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। একক ওষুধে জ্বর পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে।
পিএসআরআই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রধান ডা. প্রশান্ত সিনহা জানান, “এই সিজনে ঘুরে বেড়ানো ভাইরাসগুলির তীব্রতা বেশি। ফলে একমাত্র প্যারাসিটামল দিয়ে অনেক সময় জ্বর নামছে না।” তিনি আরও বলেন, শরীরে জলের শূন্যতা, দুর্বল পুষ্টি, ভুল মাত্রা বা ছয় ঘণ্টার ব্যবধান না মেনে ওষুধ খাওয়ার কারণেও কার্যকারিতা কমে যায়।
ডা. সিনহার মতে, ডেঙ্গু, ফ্লু, ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ বা টাইফয়েডও এমন জ্বর তৈরি করতে পারে যা শুধু প্যারাসিটামলে সহজে নামবে না। আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানিয়েছেন,“প্যারাসিটামল মূলত মস্তিষ্কের টেম্পারেচার সেট পয়েন্ট কমায়। কিন্তু কিছু শক্তিশালী ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে জ্বর আংশিক নামলেও পুরোপুরি নাও নামতে পারে।”
চিকিৎসকদের পরামর্শ, যদি ৪৮ ঘণ্টা ধরে জ্বর থাকে এবং সঠিক মাত্রায় ওষুধ খাওয়ার পরও না কমে, কিংবা জ্বর ১০২–১০৩ ডিগ্রির ওপরে থাকে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সেখানে আপনাকে খেয়াল করতে হবে যদি ভয়ানক মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, বমি, চামড়ায় ফুসকুড়ি, পেটব্যথা অথবা অস্বাভাবিক দুর্বলতা হয় তাহলে আর দেরি করা যাবে না। শিশু, বৃদ্ধ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগী ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম এমন মানুষদের ক্ষেত্রে মাঝারি জ্বর হলেও দ্রুত ডাক্তার দেখানো জরুরি।
চিকিৎসকরা বলছেন বদলে যাওয়া ভাইরাস সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী জ্বরের একটি কারণ হলেও একমাত্র নয়। নিউমোনিয়া, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন বা টাইফয়েডের মতো রোগও জ্বর তৈরি করতে পারে। তাই কেবল জ্বর কমানো নয়, এর মূল উৎস খুঁজতে হবে। রক্ত পরীক্ষা, ডেঙ্গু বা ফ্লু টেস্ট, এক্স-রে প্রভৃতি পরীক্ষার মাধ্যমে কারণ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি পর্যাপ্ত জলপান, বিশ্রাম, শরীরের তাপমাত্রা ও অক্সিজেন লেভেল পর্যবেক্ষণও সমান জরুরি।
যদি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ ধরা পড়ে তবে চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারেন। অন্য ধরণের জ্বর কমানোর ওষুধ বা হাসপাতালে পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন হতে পারে। তবে চিকিৎসকরা সতর্ক করেছেন নিজে থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বা শক্তিশালী ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক।
তবে চিকিৎসকরা একটি বিষয়ে একমত, হালকা জ্বরে প্যারাসিটামল এখনও কার্যকর। তবে যদি তাপমাত্রা টানা বাড়তেই থাকে, তখন শুধু ওষুধ খেয়ে বসে না থেকে আসল কারণ খুঁজে বের করা জরুরি। জ্বরকে হালকাভাবে নেওয়া নয়, বরং সময়মতো সঠিক চিকিৎসাই জীবন বাঁচাতে পারে।