• বৈষম্য ঘোচাতেই চালু হয়েছিল শ্রীরামপুরের চাতরার দাস বাড়ির পুজো
    এই সময় | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • প্রদীপ চক্রবর্তী, শ্রীরামপুর

    ইংরেজদের বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই করার পরে ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হলেও, দেশের অভ্যন্তরে জাতপাত ও ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ মানুষের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ১৯৬৭ সালে পুজোর আগে বন্যায় চারদিক ভেসে যায়। বিপদগ্রস্তদের উদ্ধারে ব্যকুল হয়ে ওঠেন দাস বাড়ির কর্তা অনিল। সমাজ সেবার কাজে একের সঙ্গে অন্যের দূরত্ব ঘোচাতেই, উৎসবের আবহে সবাইকে একসূত্রে বাঁধতে, নিজের বাড়িতেই দুর্গা পুজোর প্রচলন করেন স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রয়াত অনিলকুমার দাস। তারপর থেকে টানা ৫৮ বছর ধরে পুজো হয়ে আসছে শ্রীরামপুর চাতরার দাস বাড়িতে।

    পূর্বজর পরম্পরা মেনেই এখনও জাতি-বর্ণ-ধর্ম-শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই ষষ্ঠী থেকে দশমী পাঁচটা দিন মেতে ওঠেন উৎসবের আনন্দে। যে কারণে, দাস বাড়ির পুজোকে মিলনোৎসব ও সম্প্রীতির উৎসবও বলা হয়। একচালার ডাকের সাজে, দুর্গামা তাঁর সন্তান-সন্ততিদের নিয়ে হাজির হন দাসবাড়ির দুর্গাপুজোয়। আড়ম্বর, থিমের কোনও বালাই ছিল না, ছিল ভক্তি ও অন্তরের টান। গ্রামের গরিব পটুয়ার হাত ধরে মা আর তাঁর সন্তানরা আসতেন।

    বাড়ির বর্তমান কর্তা, চিকিৎসক প্রদীপকুমার দাস স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, 'দু'-মাস আগে থেকে মাটি পড়া, সাজ-সজ্জা নিয়ে ছোটরাও বিভোর হয়ে থাকতাম। স্কুলে গেলেও মনটা পড়ে থাকত আটচালার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ছোট-বড় সবার সঙ্গে রঙ্গ-তামাসা করতেন। আমাদেরও খুব ভালো লাগত। সপ্তমী থেকে বাবা সবাইকে কাজ ভাগ করে দিতেন। আমাদের ছোটদের ভাগে জুটত, বসে বসে মাটির ধুনুচিতে নারকেল ছোবড়ায় আগুন ধরিয়ে ধুনো দেওয়া ও তালপাখা দিয়ে বাতাস দেওয়া। ধুনোর গন্ধে চারদিক ভরে উঠত।

    ধুনোর ধোঁয়ায় চোখ জ্বালা করলেও,সে এক অন্য আনন্দ। ঢাকি পাড়ার ঢাক ও কাঁসি বাজলে, পুজোমণ্ডপ জমে যেত। নতুন জামাকাপড় পরে আমরাও খুব আনন্দ করতাম। কম পয়সার বাজেট হলেও, শুরুতে গ্রামের সব লোকজনকে বসিয়ে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হতো। দশমীর সন্ধ্যায় ভিসিআর ভাড়া করে সিনেমা দেখানো হতো।'এই বাড়ির আর এক সদস্য পেশায় চিকিৎসক ঈশিতা দাস বলেন, 'পুজোর দিনগুলোতে বাড়িতেই থাকি। চতুর্থীর রাতে আগমনি উপলক্ষে গান-বাজনার আসর বসে। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়। নবমীর দুপুরে ভোগ বিলি করা হয়।
  • Link to this news (এই সময়)