• এখনও বাড়ি ফেরা হয়নি এয়ার ইন্ডিয়া প্লেন ক্র্যাশের একমাত্র সার্ভাইভারের, ফিরতে কি আর পারবেন?
    এই সময় | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • চলতি বছরের ১২ জুন, সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে ভারতের সবথেকে বড় বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল। আহমেদাবাদে ভেঙে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১। এই দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছিল বিমানে থাকা ২৪১ জনের। আশ্চর্যজনক ভাবে বেঁচে গিয়েছিলেন মাত্র একজন — ব্রিটেনের লেস্টারের বাসিন্দা ৪০ বছরের বিশ্বাস কুমার রমেশ। তার পরে তিন মাস কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও ব্রিটেনে ফিরতে পরেননি বিশ্বাশ কুমার। রয়ে গিয়েছেন ভারতে। চলছে মনের চিকিৎসা। বিমান দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গেলেও তাঁর মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না।

    প্রাণে বাঁচলেও এই দুর্ঘটনায় কম মূল্য চোকাতে হয়নি বিশ্বাস কুমারকে। তাঁর ভাই অজয় ছিলেন একই বিমানে। তাঁকে হারিয়েছেন। সেই শোক, বেঁচে যাওয়ার অপরাধবোধ, যাকে ‘সার্ভাইভার্স গিল্ট’ বলে এবং ভয়ঙ্কর দর্ঘটনার মানসিক আঘাত কাটিয়ে এখনও বের হতে পারছেন না তিনি। ভারতেই তাঁর মনের চিকিৎসা চলছে।

    তাঁর খুড়তুতো ভাই সানি জানিয়েছেন, দুঃস্বপ্ন এবং অনিদ্রায় ভুগছেন বিশ্বাস কুমার। তিনি বলেছেন, ‘মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে আচমকা ওর ঘুম ভেঙে যায়। তার পরে আর ঘুম আসতে চায় না। ও খুব চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। এমনকী বিদেশে যে সকল আত্মীয়স্বজন আছে, তাদের সঙ্গেও কথা বলতে চায় না।’

    বিশ্বাসের স্ত্রী ইতিমধ্যে তাঁদের ছোট ছেলেকে নিয়ে ব্রিটেনে ফিরে এসেছেন। ছেলের স্কুল খুলে যাচ্ছে। স্বামীর পাশে থাকার উপায় নেই। ‘দ্য টাইমস’কে তিনি বলেছেন, ‘ছেলে ওর বাবাকে খুব মিস করছে। সব কিছু ওর (বিশ্বাস কুমারের) সামনেই ঘটেছিল এবং সবচেয়ে বড় কথা এই দুর্ঘটনায় ও ওর ভাইকে হারিয়েছে। আমি জানি না ও কবে ব্রিটেনে ফিরে আসবে। ওর চিকিৎসা এখনও চলছে।’

    বিশ্বাস কুমারের আত্মীয়স্বজনদের আশঙ্কা, বিমানযাত্রা নিয়ে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বিশ্বাস কুমারের মনে, তাতে তাঁর পক্ষে আর কখনও বিমানে চাপা সম্ভব না-ও হতে পারে। ‘ডেইলি মেইল’-কে বিশ্বাসের শ্যালক বলেছেন, ‘আমার তো মনে হয় ও ভারতেই থেকে যাবে। কারণ আবার বিমানে উঠতে ওর খুব ভয় করবে।’

    দুর্ঘটনার পরপরই দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে, ঘটনার ভয়াবহতার বিবরণ দিয়েছিলেন বিশ্বাস কুমার। তিনি বলেছিলেন, ‘ওড়ার পাঁচ থেকে দশ সেকেন্ডের মধ্যেই মনে হয়েছিল বিমানটি বাতাসে আটকে গিয়েছে। হঠাৎ কেবিনে সবুজ এবং সাদা আলো দপদপ করতে শুরু করে। তার পর বিমানটি কোনও একটা জায়গায় ধাক্কা মারে।’

    বিমানটি ভেঙে পড়েছিল আমেদাবাদের বিজে মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল ভবনের উপরে। হস্টেল প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল আরোহীদের মৃতদেহ এবং বিমানের ধ্বংসাবশেষ। বিশ্বাস বলেছিলেন, ‘জ্ঞান ফেরার পরে দেখেছিলাম, আমার চারপাশে মৃতদেহ পড়ে আছে। আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। উঠে দৌড়তে শুরু করেছিলাম। এর পরে কেউ একজন আমায় ধরে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দিয়েছিলেন।’

    তাঁকে আমেদাবাদ সিভিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁর বুক, চোখ এবং পায়ে আঘাত লেগেছিল। ১৭ জুন তাঁকে সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। ওই দিনই তার ভাই অজয়ের দেহাবশেষ তুলে দেওয়া হয়েছিল তাঁদের পরিবারের হাতে। পরের দিন, দিউতে অজয়ের শেষকৃত্যের সময়ে তাঁকে কাঁধে করে ভাইয়ের ছাই বহন করতে দেখা গিয়েছিল।

    শারীরিক ভাব সুস্থ হলেও, তাঁর মনের সুস্থতা এখনও ফেরেনি। কতদিনে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন, বা, আদৌ হবেন কি না, সেই বিষয়ে রয়েছে গভীর অনিশ্চয়তা।

  • Link to this news (এই সময়)