• বিদেশি ঋণে ধুঁকছে মোদির ভারত, এক বছরে ১০ শতাংশ বেড়ে লোন ৬৫ লক্ষ কোটির
    বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: নরেন্দ্র মোদির ‘সৌজন্যে’ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের মাথায় এখন ১ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা ঋণের বোঝা! কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের জমানায় দিন দিন বেড়েই চলেছে সেই অঙ্কটা। বিশেষত বিদেশি ঋণ। একথা জানাচ্ছে খোদ সরকারি রিপোর্টই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার পরিসংখ্যান মোতাবেক, গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ভারতের স্রেফ বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৬৫ লক্ষ কোটি টাকা। আর তার সুদ? সেব্যাপারে নির্দিষ্ট তথ্য অবশ্য মিলছে না। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের হিসেব, চলতি অর্থবর্ষেই বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণ মিলিয়ে সুদের অঙ্ক দাঁড়াবে আনুমানিক ১২ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা।

    স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, ‘বিশ্বগুরু’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কৃতিত্ব কোথায়? সরকার এবং তার তল্পিবাহকরা সুযোগ পেলেই প্রচার করেন, বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতির দেশ হতে চলেছে ভারত। শীঘ্রই অর্থনীতি স্পর্শ করবে ৫ ট্রিলিয়ন বা ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের মাইলফলক। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ঋণও। এ তো একপ্রকার ‘ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেৎ’, অর্থাৎ ধার করে ঘি খাওয়ার সমান! বলছে সরকারি তথ্যই। ফলে দেশজুড়ে প্রধানমন্ত্রীর ৭৫ বছরের জন্মদিন ও ১৫ দিন ধরে ‘সেবাপক্ষ’ পালনের প্রচারে কোটি কোটি খরচের মধ্যেই অর্থনীতির কঙ্কালসার চেহারাটাও বেরিয়ে পড়ছে।

    সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি বাজেট পেশের সময় অর্থমন্ত্রকের হিসেব ছিল—২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে দেশের মোট ঋণের বোঝা দাঁড়াবে ১৮১ লক্ষ কোটি টাকায়। চলতি অর্থবর্ষের (২০২৫-২৬) শেষে তা হতে পারে আনুমানিক ১৯৬ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু তার পাঁচ মাস পরেই (গত আগস্টে) সরকার আরও একটি হিসেব দিয়েছে। সেখানে সাদা-কালো অক্ষরে লেখা, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারতের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৮৫ লক্ষ কোটি টাকা। আগামী বছর ৩১ মার্চে তা গিয়ে দাঁড়াবে আনুমানিক ২০০ লক্ষ কোটি টাকায়। ফলে বাজেট পেশের সময় সরকারের আন্দাজ যে সঠিক ছিল না, এটা স্পষ্ট। মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য পতনের কারণেই এই বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলেছে। 

    নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার সময় ভারত সরকারের ঋণ ছিল ৭০ লক্ষ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ৫১.৫ শতাংশ। কিন্তু অর্থনীতিবিদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জমানার সেই ধারের বোঝাই ব্যাপক হারে বাড়িয়েছেন মোদি। তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে জিডিপি’র ৫৬ শতাংশে। টাকার অঙ্কে ২০০ কোটি টাকা। সরকারের তথ্যই বলছে, চলতি বছরের ৩১ মার্চের হিসেবে বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৭৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে ১০.১ শতাংশ। এর মধ্যে লং টার্ম (অর্থাৎ যা মেটাতে হবে এক বছরের বেশি সময় ধরে) ঋণের পরিমাণ ৬০১.৯ বিলিয়ন ডলার। আর শর্ট টার্ম (যা মেটাতে হয় এক বছরের মধ্যে) ১৩৪.৫ বিলিয়ন ডলার। ফলে প্রচারের ঢক্কানিনাদই বাজছে। বাস্তবে বাড়ছে ঋণের বোঝা!
  • Link to this news (বর্তমান)