• গাজোলের রানিপুরের চৌধুরীবাড়ির পুজো শুরু হয় বন্দুকের গুলি ছুড়ে
    বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • মঙ্গল ঘোষ, পুরাতন মালদহ: ইংরেজি ১৯২৬ সাল অর্থাৎ ৯৯ বছর আগের কথা। গাজোলের রানিপুর চৌধুরীবাড়ির মেয়ে অনেক শখ করে পাশের গ্রাম মাঝরায় সর্বজনীন পুজো দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু ওই সময় পুজো উদ্যোক্তারা জমিদার বাড়ির মেয়েকে তেমন আপ্যায়ন করেনি। এতে তাঁর ভীষণ মন খারাপ হয়। তারপর সে নিজের বাড়ি ফিরে এসে সমস্ত ঘটনার কথা খুলে বলে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। এরপর তৎকালীন জমিদার ম্যানেজারকে দ্রুত নির্দেশ দিয়ে বাড়িতে মা দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। ঠিক এমনটাই জানিয়েছেন বর্তমানে পরিবারের সদস্য উদয় চৌধুরী। জেদ থেকেই পুজোর প্রচলন হয় বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে।

    আগে এই জমিদার বাড়ির পুজোর ব্যাপক জৌলুস ছিল। বাইরের গ্রাম থেকে বহু মানুষ পুজো দেখতে আসত। প্রচুর ভক্তের সমাগম হতো। নিয়ম করে যাত্রাপালার আসর বসানো হতো। কিন্তু এখন যাত্রা আর হয় না। তবে পুজো খুব নিয়ম এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়। অঞ্জলি দিতে ভিড় উপচে পড়ে। অতীতের নিয়ম অনুয়ায়ী এবারও সপ্তমীর দিন কলাবউ স্নান করিয়ে শূন্যে গুলি চালিয়ে পুজো শুরু হবে। তার জোর প্রস্তুতি চলছে।

    উদয়বাবু বলেন, আমাদের পুজো বেশ প্রাচীন। বাংলার ১৩৩৩ এবং ইংরেজির ১৯২৬ সালে পুজো শুরু হয়। এবারে ১০০তম বছরে পদার্পণ করছে। পুজোর দিন শূন্যে গুলি ছোড়ার একটাই উদ্দেশ্য, দূরের গ্রামবাসীদের জানিয়ে দেওয়া হয় জমিদার বাড়ির পুজো শুরু হল। এই রেওয়াজ আগে থেকেই রয়েছে। এবারও হবে। 

    উল্লেখ্য, গাজোল-বামনগোলা রাজ্য সড়ক ধরে কিছুটা দূরে এগিয়ে গেলেই রানিপুর গ্রাম যাওয়া যায়। ওই গ্রামের পথ ধরে জমিদার বাড়িতে ঢুঁ দিলেই দুর্গামন্দির দেখা যাবে। ওই মন্দিরের সামনে নাটমন্দির রয়েছে। নাটমন্দিরে আগে যাত্রা হতো। আদিবাসী নৃত্য হতো। আদিবাসী কিছু দল এসে এখনও নৃত্য করে। তবে যাত্রা হয় না। মূল মন্দিরে মা পূজিতা হন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মায়ের রূপ সাবেকি। এক চালাতেই একসঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী সহ অন্য দেবদেবী থাকেন। পুজোর দিনগুলিতে অন্ন ভোগের নিয়ম নেই। ঘি দিয়ে ভাজা লুচি, ফল, মিষ্টি মাকে ভোগ দেওয়া হয়। সেই প্রসাদ ভক্তদের বিতরণ করা হয়। দশমীতে নিয়ম মেনে মায়ের বিসর্জন দেওয়া হয়। পুজোর আর বেশি দিন বাকি নেই। এখন ওই বাড়িতেই জোর কদমে মায়ের মূর্তি গড়ার কাজ চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)