৩৩০ বছর আগে শুরু গাজোলের নিত্যানন্দপুরে জমিদারবাড়ির পুজো
বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, পুরাতন মালদহ: ইংরেজি ১৬৯৫ সাল অর্থাৎ ৩৩০ বছর আগে ব্যাপক জৌলুসের সঙ্গে গাজোলের নিত্যানন্দপুরের জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে পুজো চলে পরবর্তী ২৬৩ বছর পর্যন্ত। কিন্তু ১৯৫৮-৫৯ সালে জমিদার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। বাড়ির প্রবীণ সদস্যরা একে একে প্রয়াত হন। বাড়িতে মহিলা থাকলেও পুজোর জোগাড় করতে তাঁদের কার্যত হিমশিম খেতে হতো। সেজন্য দু’বছর নানা সমস্যার কারণে পুজো বন্ধ থাকে।
কিন্তু ৬৭ বছর আগে কামাখ্যা থেকে এক সাধক নিত্যানন্দপুরের জমিদার বাড়িতে আসেন। যথারীতি এলাকায় ব্যাপক শোরগোল পড়ে যায়। দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে আসেন। ওই সাধক বাড়ির সদস্যদের কাছে পুজো বন্ধ হওয়ার কারণ জানতে চান? সাধক সবকিছু শুনে বেশকিছু আধ্যাত্মিক কথা বলে পরিবারকে আবারও পুজো করতে বলেন। খুব কম সময়ের মধ্যে তখন মৃৎশিল্পী জোগাড় হয়। প্রতিমা তৈরি হয়। অলৌকিক ভাবে গ্রামে পুরোহিত আসেন অসম থেকে। ১৯৬০ থেকে পুজো নতুন করে শুরু হয়। এক মাস তিনি জমিদার বাড়িতে ছিলেন। কালীপুজোর পর তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যান বলে দাবি জমিদার পরিবারের সদস্যদের। তারপর থেকে আর পুজো বন্ধ হয়নি। আজও গ্রামে বিশেষ ঐতিহ্য বহন করে। এবারও পুজোর আয়োজনে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
স্থানীয় এবং উদ্যোক্তাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, জমিদারবাড়ির মা দুর্গা সাবেকি। এক চালার প্রতিমায় দেবী পূজিতা হন। মায়ের মাথার উপরে মহাদেব বিরাজ করেন। পাশে নন্দী এবং ভৃঙ্গী থাকেন। এছাড়াও লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক সহ অন্য দেব দেবী থাকেন। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত খুব শ্রদ্ধা সহকারে পুজো হয়। বলির নিয়ম নেই। বৈষ্ণব মতে মায়ের আরাধনায় এলাকাবাসী অঞ্জলি দিতে ভিড় করেন। ওই পরিবারের অন্যতম সদস্য শিবেশ কুমার সরকার বলেন, ৩৩০ বছর আগে আমাদের পূর্ব পুরুষদের বসবাস গাজোলে ছিল না। ওই সময় বর্ধমানের রাজ পরিবারের কিছু সম্পত্তি গাজোলে ছিল। সেগুলি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই এলাকায় আসেন। তখন থেকেই এই পুজো শুরু। মাঝে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। এক সাধক এসে ৬৭ বছর আগে পুজো শুরু করেন। বর্তমানে আমরা চার শরিক রয়েছি। মায়ের নামে কিছু জমি রয়েছে। ঐতিহ্য ধরে রাখতে দায়িত্ব ভাগ করে পুজোর আয়োজন করা হয়। পুজোর কয়েকদিন সবাই একসঙ্গে থেকে আনন্দ করি। ফাইল চিত্র