• আত্রেয়ীতে হারিয়ে যেতে বসা রাইখর মাছের কৃত্রিম প্রজনন জলপাইগুড়িতে
    বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদী থেকে হারিয়ে যেতে বসা রাইখর মাছের কৃত্রিম প্রজনন জলপাইগুড়িতে! তিস্তার গুলসা ট্যাংরার সঙ্গে ময়নাগুড়ির বার্নিশে পুকুরেই বেড়ে উঠছে ওই নদীয়ালি মাছ। রাজ্যের মৎস্যদপ্তরের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষানিরীক্ষার পর এব্যাপারে সাফল্য পেয়েছেন জলপাইগুড়ির মৎস্যচাষিরা। উত্তরের নদী থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণের পাশাপাশি মিষ্টিজলের পুকুরে ওইসব মাছের চাষের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন তাঁরা। তিস্তার বোরোলি কিংবা দাড়াঙ্গি মাছ পুকুরে চাষের চেষ্টা চালাচ্ছেন জেলার মৎস্যচাষিরা। 

    জলপাইগুড়ি জেলা মৎস্য আধিকারিক অমিত সরকার বলেন, বালুরঘাটের আত্রেয়ী নদীতে হারিয়ে যেতে বসা সুস্বাদু রাইখর মাছের প্রজননে সক্ষম হয়েছেন আমাদের জেলার মৎস্যচাষিরা। সেইসঙ্গে পুকুরে রাইখর মাছ চাষ শুরু করেছেন তাঁরা। ময়নাগুড়ির বার্নিশে প্রায় ১৫ বিঘা পুকুরে তিস্তার গুলসা ট্যাংরার সঙ্গে আত্রেয়ীর রাইখর মাছ চাষ করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদীয়ালি মাছ ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পুকুরে কিংবা ট্যাঙ্কে মাছচাষ নিয়েও জলপাইগুড়িতে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে।

    একসময় আত্রেয়ী নদীর বুকে ঝাঁকে ঝাঁকে জালে উঠত রাইখর। ভরা জ্যোৎস্নায় যখন নদীর বুকে ভেসে বেড়াত রুপালি ওই মাছের ঝাঁক, চিকচিক করত আত্রেয়ীর জল। তিস্তার বোরোলির মতো না হলেও স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে রাইখর মাছের কদর নেহাত কম নয়। দিনাজপুরের প্রবীণদের মুখে এখনও লেগে রয়েছে আত্রেয়ীর রাইখর মাছের স্বাদ। তাঁদের কথায়, বাংলাদেশের আত্রাই নদীর সঙ্গে যোগ রয়েছে বালুরঘাটের আত্রেয়ীর। ওপার বাংলার চলনবিল থেকে উজানে রাইখরের জোয়ার আসত। জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ত ছোট কাঁটাওয়ালা রাইখর। বালুরঘাট শহরের তহবাজার, সাহেব কাছারি বাজার, চকভৃগু বাজার, পাওয়ার হাউস বাজার সহ সর্বত্রই দেখা মিলত অনেকটা বাটা মাছের মতো দেখতে রাইখরের। কিন্তু এখন আর তেমন দেখা মেলে না। ফলে রাইখরের জোগান কমছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

    এই পরিস্থিতিতে কৃত্রিম প্রজননের পাশাপাশি পুকুরে রাইখর মাছচাষে উদ্যোগী হয়েছেন ময়নাগুড়ির কৌশিক রায়। তিনি বলেন, ফার্মার্স ক্লাব ও ফিশ প্রোডিউসার কোম্পানি (এফপিসি) গড়ে বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা রাইখর মাছের ব্রিডিংয়ের চেষ্টা করছিলাম। অবশেষে সফল হই। প্রথম প্রথম বেশকিছু মাছ মারা যাচ্ছিল। কিন্তু এখন সাফল্যের হার অনেকটাই বেড়েছে। দশমাসে একটি রাইখর মাছ একশো গ্রাম ওজন হচ্ছে। পুকুরে চাষ করা রাইখর মাছ বিক্রিও করা হয়েছে। নদীর মতো না হলেও স্বাদ ভালোই। তিনি বলেন, রাইখরের পাশাপাশি আমরা তিস্তার গুলসা ট্যাংরার ব্রিডিং করছি। আমরা ব্রিডিংয়ের পাশাপাশি পুকুরে বোরোলি চাষের চেষ্টা চালাচ্ছি। এখনও সফল হতে পারিনি। তবে শীঘ্রই আমরা পুকুরে বোরোলি চাষে সফল হব বলে আশাবাদী। তিস্তার দাড়াঙ্গি মাছও পুকুরে চাষ করার চেষ্টা চলছে। 

     নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)