নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ফের আতঙ্ক লালগড়ের জঙ্গলে। এর আগে দু’ বার বাঘ ঢুকে পড়ার স্মৃতি উস্কে দিল লালগড় রেঞ্জের আজনাশুলি জঙ্গলে এক অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ। ২০১৮ সালে লালগড়ে ট্রাপ ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল রয়াল বেঙ্গল টাইগারের ছবি। তবে এবারের পায়ের ছাপটি বাঘের কি না, তা এখনও জানা যায়নি। বনবিভাগ ছাপটি খতিয়ে দেখছে।
মেদিনীপুর বনবিভাগের ডিএফও দীপক এম এদিন বলেন, আজনাশুলির জঙ্গলে এক অজানা জন্তর পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। বনবিভাগের কর্মীরা পায়ের ছাপটি খতিয়ে দেখছেন। পায়ের ছাপটি মাঝারি ধরনের। প্রাথমিকভাবে পায়ের ছাপটি জঙ্গল ক্যাটের হতে পারে বলে মনে হচ্ছে। এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে। লালগড় রেঞ্জের ভাউদি বিট এলাকায় রয়েছে আজনাশুলির জঙ্গল। বৃহস্পতিবার সকালে জঙ্গল লাগোয়া গ্ৰামের পথে অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওড়িশার সিমলিপাল জঙ্গল থেকে ২০১৮ সালে লালগড়ের জঙ্গলে পূর্ণবয়স্ক একটা রয়াল বেঙ্গল টাইগার ঢুকে পড়েছিল। সেই বাঘটিকে ধরতে বনবিভাগের কালঘাম ছুটে গিয়েছিল। মেদিনীপুর বনবিভাগের চাঁদড়ায় স্থানীয় শিকারিরা বাঘটিকে মেরে ফেলেছিল। লালগড়েরর জঙ্গলে পায়ের ছাপ ঘিরে নতুন করে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ছাপটি বাঘের পায়ের মতো। মেদিনীপুর বনবিভাগের সূত্রে জানা গিয়েছে, বন বিভাগের কর্মীরা খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, পায়ের ছাপটি নয় থেকে দশ সেন্টিমিটার। অজানা জন্তু না বাঘের পায়ের ছাপ তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে ছাপটি জঙ্গল বিড়ালের হতে পারে। গতবছর ওড়িশার সিমলিপাল জঙ্গল থেকে ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া জঙ্গল হয়ে বাঘিনী জিনাত বেলপাহাড়ীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েছিল। জিনাতকে ধরার পরেও কাঁকড়াঝোরের জঙ্গলে পুরুষ বাঘের একাধিক পায়ের ছাপ পাওয়া যায়। বনবিভাগের তরফে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল বেলপাহাড়ীর গভীর জঙ্গলে বাঘের আনাগোনা রয়েছে। বেলপাহাড়ীতে জিনাতের আগমনের পর লালগড়ে রয়াল বেঙ্গল টাইগার ঢুকে পড়ার বিষয়টি নতুন করে চর্চায় চলে আসে। ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের প্রাক্তন কর্তা সমীর মজুমদার বলেন, লালগড়ে জঙ্গলে ফিশিং ক্যাট বা জংলি বন বিড়ালের দেখা পাওয়া যায়। বন বিড়ালের পায়ের ছাপে সাধারণত নখের ছাপ দেখা যায় না। বাঘ বা চিতাবাঘের ক্ষেত্রে নখ স্পষ্ট বোঝা যায়। পরীক্ষা করলেই ছাপটি বাঘ না বন বিড়ালের তা বোঝা যাবে। আজনাশুলি গ্ৰামের বাসিন্দা মনোজ মাহাত বলেন, লালগড়ে আগেও বাঘ ঢুকেছিল। জঙ্গল থেকে আমরা শুকনো কাঠ সংগ্রহ করি। গোরু, ছাগল চড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। অজানা জন্তুর পায়ের ছাপ দেখার পর গ্ৰামের বাসিন্দারা জঙ্গলে যেতে ভয় পাচ্ছে। জঙ্গলে এমন পায়ের ছাপ আগে দেখিনি। বন বিভাগের কর্মীরা আবার বলছেন ছাপটি হায়নারও হতে পারে। গ্ৰামজুড়ে স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের এক আধিকারিক বলেন, ওড়িশার সিমলিপাল থেকে গুড়াবান্দা, চাকুলিয়া, শিমুলপাল, কটুচুয়া থেকে বান্দোয়ান পর্যন্ত দীর্ঘ জঙ্গল রয়েছে। বাঘিনী জিনাত বেলপাহাড়ীতে এই পথেই ঢুকে পড়েছিল। আগে লালাগড়ে বাঘ ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।