• নয়াগ্রামের জঙ্গলে জামিরাপাল রাজবাড়ির অষ্টধাতুর সিংহবাহিনীর পুজো দেখতে ভিড় করেন পর্যটকরা
    বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: চারশো বছর আগে ওড়িশা থেকে অষ্টধাতুর সিংহবাহিনী দুর্গামূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল নয়াগ্রামের জঙ্গলের ভিতরে গড়ে। ওই গড় ছিল ‘পাইকারা ভূঞ্চা’ রাজাদের। তাঁরা স্বাধীন ভাবে সেখানে রাজত্ব চালাতেন। জামিরাপাল রাজবাড়িতে সেই মূর্তি আজও পুজো করা হয়। দুর্গাপুজোর চারদিন ছাড়াও নিত্যপুজো হয় এই বিগ্রহের। মহালয়া থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত ঠাকুরদালানে চলে চণ্ডীপাঠ। তবে শারদোৎসবের চারদিন অষ্টধাতুর সিংহবাহিনীর পাশাপাশি পৃথক মন্দিরে হয় মৃন্ময়ী দেবী প্রতিমার পুজোও।

    নয়াগ্রামে মোট তিনটি গড়ের অস্তিত্ব ছিল এক সময়ে। প্রথম ও দ্বিতীয় গড়ের আজ আর কোনও চিহ্ন পাওয়া যায় না। তৃতীয় গড়টি পরবর্তীতে নির্মাণ করা হয়। জামিরাপাল গড়রাজবাড়ি নামে যা আজ পরিচত। ময়ূরভঞ্জের রাজারা জামিরাপাল গড়ের এক সদস্যকে ‘পাইকারা ভূঞ্চা’ উপাধি দিয়েছিল। বহিঃশত্রুর আক্রমণ হলে জামিরাপালের রাজারা সৈন্য নিয়ে ময়ূরভঞ্জের রাজাদের হয়ে যুদ্ধ করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধেও জামিরাপালের রাজারা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ করেছিলেন। ১৮০৩ সালে দ্বিতীয় মারাঠা যুদ্ধের ফলাফলের জেরে জামিরাপাল গড় ছেড়ে রাজা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে শাসন ক্ষমতা বজায় রাখা হয়। দেবীর কৃপাতেই তা সম্ভব হয়েছিল বলে রাজবাড়ির সদস্যরা আজও মনে করেন। জামিরাপাল রাজবংশের বারবার উত্থান পতনেও পুজো কিন্তু বন্ধ হয়নি। জামিরাপাল রাজবাড়ি ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। পুজোর পুরনো জৌলুস কমলেও প্রাচীন প্রথা ও রীতি মেনেই আজও পুজো হয়। পুজোতে  স্থানীয় বাসিন্দারাও শামিল হন। রাজবাড়ির বাম দিকে বাংলা রীতিতে তৈরি দুই কক্ষ বিশিষ্ট মন্দির রয়েছে। মন্দিরে একটি কক্ষে রাধাকৃষ্ণের পুজো হয়, অপরটিতে অষ্টধাতুর সিংহবাহিনীর নিত্যপুজো চলে। মন্দিরের গায়ে কৃষ্ণ, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, গরুড়, নৃত্যরত নারীর ছবি খোদাই করা আছে। মন্দিরের মৃন্ময়ী প্রতিমার পুজো দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। 

    সিংহবাহিনীর অষ্টধাতুর বিগ্ৰহ নিয়ে নানা কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, জাগ্ৰত দেবীকে মন্দিরের বাইরে নিয়ে গেলে দেবী রুষ্ট হন। মন্দির থেকে অষ্টধাতুর বিগ্ৰহটি একবার চুরি হয়ে যায়। দুষ্কৃতীরা বিগ্ৰহটি কোনও অজ্ঞাত কারণে ফেলে চলে  যায়। রাজবাড়ির সদস্যরা দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে গড় সংলগ্ন নদীঘাট থেকে মূর্তটি উদ্ধার করে আনেন। মন্দিরে বিগ্ৰহটি আবার প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজবাড়ির সদস্য সঞ্জীব দাস মহাপাত্র বলেন, ওড়িশা থেকে চারশো বছর আগে এই অষ্টধাতুর মূর্তি নিয়ে এসে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। পরিবারের সদস্যরা বিগ্ৰহটিকে সৌভাগ্য ও বংশমর্যাদার প্রতীক বলে মনে করেন। মৃন্ময়ী প্রতিমার পুজোর সূচনা হয় আড়াইশো বছর আগে। পুজোর সময় চারদিন ধরে যজ্ঞ হয়। চারজন ব্রাহ্মণ উপস্থিত থাকেন। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মেনে পুজো হয়। হয় চালকুমড়ো বলি। মহালয়া থেকে ষষ্ঠী পর্যন্ত মন্দিরে চণ্ডীপাঠ করা হয়। নয়াগ্ৰামের বাসিন্দা প্রণব মাহাত বলেন, জামিরাপাল রাজবাড়ির পুজোর সেই জৌলুস আজ আর নেই। তবে প্রাচীন রাজবংশের এই পুজো ঐতিহ্য ও সাবেকিয়ানা আজও ধরে রেখেছে। বহু ঘটনার সাক্ষী এই রাজবাড়ির পুজো দেখতে পর্যটকরা ভিড় করেন। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)