ভিন রাজ্যে ডাক পেয়েও দুঃশ্চিন্তায় মহিলা ঢাকিরা, হেনস্তা হবে না তো!
বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, কাটোয়া: একরাশ উদ্বেগকে সঙ্গী করেই উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড প্রভৃতি রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন কাটোয়ার মহিলা ঢাকির দল। রাজ্যে রাজ্যে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর আক্রমণ চলছে। তা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা ভিন রাজ্যের পুজোয় ঢাক বাজাতে রওনা দিচ্ছেন। পেটের টানই যার মূল কারণ।
কাটোয়া মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের অফিসার সুস্মিতা মুখোপাধ্যায় বলেন, এবার যে সব লোকশিল্পীরা ভিন রাজ্যে যাচ্ছেন, তাঁদের যাবতীয় তথ্য যেমন, কোথায় যাচ্ছেন, কাদের ডাকে যাচ্ছেন, সব খবর নিচ্ছি আমরা। যদি কেউ ভিন রাজ্যে গিয়ে বিপদে পড়েন, তাহলে রাজ্য সরকার তাঁদের পাশে থাকতে পারবেন।
কাটোয়ার মহিলা ঢাকিরা মূলত দিনদরিদ্র পরিবারের মেয়ে, বউ। বাড়তি রোজগারের আশায় সংসারের হেঁশেল সামলে ঢাক নিয়ে ছোটেন পুজো মণ্ডপে। কাটোয়ার সুদপুর, বাজার বনকাপাশি, আউরিয়া প্রভৃতি গ্রামের বহু গৃহবধূ এখন শুধু আর চুল বাঁধেন না, কাঁধে ঢাক নিয়ে ছোটেন বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে। কাটোয়ার সুদপুর গ্রামের বাসিন্দা চিত্রা দাস গ্রামের প্রতিবেশী অভাবি ঘরের বধূদের নিয়ে ঢাকির দল তৈরি করেছেন। আউরিয়া, বাজার বনকাপাশি গ্রামের কয়েকজন মহিলাকেও তিনি দলে নিয়েছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিবাহ, অন্নপ্রাশন থেকে শুরু করে পুজো প্যান্ডেলগুলিতে তাঁর প্রমিলা বাহিনী নিয়ে মাতিয়ে তোলেন। পুজোর মরশুমেও তাঁদের বিভিন্ন কমিটি থেকে ডাক আসছে।
এবারে কাটোয়া থেকে উত্তরপ্রদেশের লখনউ যাচ্ছেন ১০ জন মহিলা ঢাকি। ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে যাচ্ছেন ১০ জন মহিলা ঢাকি। এছাড়া অন্যান্য রাজ্যেও কেতুগ্রাম সহ কাটোয়ার মহিলা ঢাকিরা বরাত পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা ঘোর দুশ্চিন্তায়। ভিন রাজ্যে বাঙালির উপর যে আক্রমণ চলছে, তাতে তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কিত। তবুও রুজির টানে জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে যেতে প্রস্তুত।
সুদপুরের বধূ চিত্রা দাস বলেন, বাংলা ভাষা ছাড়া আমরা অন্য ভাষা তেমন জানি না। তবে পেটের টান বড় টান। সেই টানেই আমরা উত্তরপ্রদেশ যাচ্ছি। আরেক লোকশিল্পী সীতারাম দাস বলেন, গতবছর আমর অসমে গিয়ে বিপদে পড়েছিলাম। আমাদের পারিশ্রমিক দেয়নি। এবারে ভিন রাজ্যে যেতে ভয় লাগছে বটে, কিন্তু যেতে তো হবে।
কাটোয়া মহকুমাজুড়ে ৪৬ জন মহিলা ঢাকি রয়েছেন। তাঁদের মোট ৫টি দল। প্রত্যেকেই কলকাতা সহ ভিন রাজ্যে যাচ্ছেন বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে। ২০১৪ সালে চিত্রা দেবীর মনে হয়, শুধু পুরুষরাও কেন, মহিলারাও ঢাক বাজিয়ে সংসার চালাতে পারেন।
এরপর তিনি প্রতিবেশী দুঃস্থ বধূদের ঢাক বাজানোকে পেশা হিসাবে নেওয়ার জন্য বোঝান। বাধা বিপত্তি কাটিয়ে তিনি গ্রামে ১৪ জন মহিলাকে নিয়েই দল তৈরি করেন। তারপর থেকেই তিনি ত্রিপুরা, অসম, ওড়িশা সহ বিভিন্ন এলাকায় ঢাক নিয়ে পাড়ি দেন। আরেক মহিলা ঢাকি জোৎস্না দাস বলেন, প্রথমে বাড়ির সবাই আপত্তি করেছিল। কিন্তু চিত্রাদির সাহসিকতায় আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। এখন ভিন রাজ্যে গিয়ে নিয়মিত ঢাক বাজাই আমরা। এতে সংসারটা হেসেখেলে চলে যায়। -নিজস্ব চিত্র