• গুরুলিয়ায় জমিদার বাড়ির একই উঠোনে দু’টি পুজো
    বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, কান্দি: একই উঠোনের দু’ দিকে দু’টি দুর্গাপুজো! খড়গ্রাম ব্লকের গুরুলিয়া গ্রামে কায়স্ত জমিদার বাড়িতে গেলে চোখে পড়ে এই অদ্ভুত দৃশ্য। একটি শুরু হয়েছিল নবাবি আমলে, আর অন্যটি এসেছে অধুনা বাংলাদেশ থেকে। দু’টি পুজো ঘিরেই মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরা। 

    ওই জমিদার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তৎকালীন জমিদার বসন্ত ঘোষ ১৭০২ সালে একটি পুজোর প্রচলন করেছিলেন। কথিত আছে, স্বপ্নাদেশ পেয়ে দুর্গাপুজো শুরু করেছলেন তিনি। একবার খাজনা বাকি পড়ায় বাংলার নবাব জমিদার বসন্ত ঘোষকে কারাবাসের সাজা দিয়েছিলেন। বাড়ির সবাই চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন, তিনি বাড়িতে না থাকলে দুর্গাপুজো হবে কী করে সেই ভেবে। কিন্তু বসন্ত ঘোষের কারাবাসকালেই দেবী দুর্গা ফের তাঁকে স্বপ্ন দিয়ে কারামুক্ত করেছিলেন। পরিবারের দাবি, দেবীর অলৌকিক মহিমায় এক রাত্রে কারাগারের সমস্ত দরজা খোলা রেখে সৈন্যরা ঘুমিয়ে পড়েছিল।  বসন্ত ঘোষের কারামুক্ত হতে সময় লাগেনি। সেবারও বাড়িো ফিরে পুজোর আয়োজন করেছিলেন। এই পুজোর বৈশিষ্ট হল, এখানকার প্রতিমা ঘোড়ামুখো সিংহের উপর আসীন। দেবীর পুজার পদ্মফুল আসে পাশের পাটন বিল থেকে। পরিবারের সদস্য দীপক ঘোষ বলেন, আমরা পদ্ম চাষ করি না। কিন্তু পুজোর সময় পাটন বিলে পদ্ম কোথাও থেকে ভেসে চলে আসে। এই রহস্য আজও উন্মোচন হয়নি। এবারও পুজোর আগেই বিলে পদ্ম ভেসে চলে এসেছে। এছাড়াও দেবীর ভোগের গুড় দিয়ে তৈরি বিশেষ মিষ্টি কাকনাড়া আজও দত্তবাড়ি থেকে আসে।

    অপর একটি পুজোর প্রচলন হয় তিরিশের দশকে। অধুনা বাংলাদেশের বগুড়ায় ঘোষেদের শরিকি জমিদারি ছিল। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওইসময় চলছিল বিশ্বব্যাপী মন্দা ও প্রজা বিদ্রোহ। বাংলাদেশেও যার প্রভাব পড়েছিল। বগুড়া থেকে আয়ও কমতে থাকে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে সৃষ্টি হওয়া দুর্ভিক্ষ। তাই সেই সময়ে বগুড়ার শরিকরা পুজো বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু পুজো বন্ধ না করে জমিদার নীলকমল ঘোষ ওই দুর্গাপুজো গুরুলিয়ায় নিয়ে আসেন। তখন থেকেই গুরুলিয়ায় দু’টি দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়। জমিদার পরিবারের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কাঞ্চনাক্ষ্য ঘোষ বলেন, আমাদের এই প্রতিমাতে ব্যাঘ্র মূর্তির দেবীর সঙ্গে শ্রীরাম ও লক্ষ্মণকেও রাখা হয়। এই পুজোর আরও একটি দিক হল উঠোনে ১০৮টি প্রদীপ জ্বালিয়ে দেবীর সন্ধ্যা আরতি করা হয়। সেখানে গিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই উঠানের একদিকে রয়েছে মাটির তৈরি একটি মন্দির। আর ঠিক উল্টোদিকে কংক্রিটের ঝাঁ চকচকে মন্দির। একই উঠোনের দু’টি পুজোর ঢাক একসঙ্গে বেজে ওঠে। একইসঙ্গেথে পুজো শুরু হয়। আবার বিসর্জনও হয় একসঙ্গেই। গ্রামের মানুষ এই দৃশ্য উপভোগ করতে এক উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকেন।
  • Link to this news (বর্তমান)