• থিমের চাকচিক্য না থাকলেও ভিড় জমে চকবুড়িমার পুজোয়
    বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, ডোমকল: সে বহু আগের কথা। ভৈরব নদের পাড়ে ছিল খড়চালার ছোট্ট একটি মন্দির। সেখানেই বসবাস করতেন এক বৃদ্ধা। ওই মন্দিরের দেখভাল করাই ছিল তাঁর কাজ। এলাকার মানুষ তাঁকে বুড়িমা বলে ডাকতেন। আর সেই থেকেই চক ইসলামপুরের বেড়েপাড়ার দুর্গাপুজো আজও পরিচিত চকবুড়িমার পুজো নামেই খ্যাত। এখানে নেই থিমের চাকচিক্যের প্রতিযোগিতা, নেই শহরের মতো আড়ম্বর। তবু ভক্তদের কাছে এই পুজো অনন্য। তাই থিমের জমানাতেও বুড়িমার পুজোয় অগণিত দর্শনার্থীর ভিড়ে ভরে ওঠে বুড়িমাতা মন্দির চত্বর। কেউ বলেন এই পুজো ৪০০ বছরের পুরোনো, কারও মতে আরও বেশি। পুজোর বয়স নিয়ে নানা মত থাকলেও পুজোর ব্যাপ্তি নিয়ে কারও দ্বিধা নেই। জেলা তো বটেই, জেলার বাইরেও এই পুজোর আলাদা পরিচিতি রয়েছে। 

    জনশ্রুতি রয়েছে, তৎকালীন সময়ে ইসলামপুর ছিল কসবা গোয়াস পরগনার অন্তর্ভুক্ত। তখন গোয়াস পরগনায় প্রচুর তন্তুবায় বসবাস করতেন। দুর্গাপুজোর সময় তাঁরা কোথাও ঘুরতে যেতে পারতেন না। বিনোদনেরও কোনও ব্যবস্থাও ছিল না। সেই ভাবনা থেকেই তাঁরা ভৈরব নদের পাড়ে আয়োজন করেন এই দুর্গাপুজোর। সারা বছর মন্দির দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন এক বৃদ্ধা। যিনি সকলের কাছে বুড়িমা না পরিচিত ছিলেন। ধীরে ধীরে তাঁর নামেই পরিচিতি লাভ করে এই পুজো। আবার ভিন্নমতও রয়েছে। অনেকে বলেন, আসলে এই পুজো প্রথম শুরু করেছিলেন বুড়িমা নিজেই। যখন তিনি পুজো আর চালিয়ে যেতে পারেননি তখন রায় জমিদাররা সাহায্যের হাত বাড়ান। জমিদারি প্রথা বিলোপের পর পুজো সর্বজনীন রূপ পেলেও আজও রায় পরিবারের পক্ষ থেকেই উপকরণ দেওয়া হয়। এমনকী তাঁদের নামেই পুজোর সংকল্প হয়।

    বুড়িমার পুজোর বিসর্জনেও বিশেষত্ব রয়েছে। জনশ্রুতি অনুযায়ী, চক বুড়িমার দুর্গা আর বাইশ পুতুলের দুর্গা দুই বোন। বাইশ পুতুল হল বোন, আর বুড়িমা দিদি। সেই শুরু থেকেই বিসর্জনের দিন বোনের বাড়ি যেত বুড়িমার দুর্গা। সেইসময় ভৈরব নদের জল থাকায় নৌকায় যেতেন বুড়িমা। তারপর দুই বোনের দেখা হওয়ার পরই হতো বিসর্জন। এখন ভৈরব নদে জল নেই। তাই আজও ঘটের মাধ্যমে বিসর্জনের আগে এই প্রতীকী মিলন ঘটে। এরপর নৌকায় করে বুড়িমার ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয় বুড়িমার বোনকে। বুড়িমাতা পুজো কমিটির সভাপতি জগন্নাথ গুঁই বলেন, আমাদের এই পুজোর আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। ঐতিহ্য আর পরম্পরাই আমাদের পুজোকে আলাদা করেছে। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান এখানে। এবছরও তার অন্যথা হবে না। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)