নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রাজডাঙা নব উদয় সংঘের মণ্ডপে ঢুকে ইভ বললেন, ‘ওয়াও! ইটস ইনক্রেডিবেল।’ ইভ নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা। এ নিয়ে পরপর তিন বছর এলেন কলকাতায়, শুধুই দুর্গোপুজোর টানে। তাঁর কথায়, ‘পৃথিবীর অনেক দেশে গিয়ে ফেস্টিভ্যাল দেখেছি। কিন্তু এমন হাতের কাজ, পাবলিক আর্ট আর কোথাও দেখতে পাইনি। তাই এই সময় বারবার কলকাতায় ছুটে আসি।’ ইভের কথার প্রতিফলন মিলল ইংল্যান্ডের জেমসের বক্তব্যেও। পেশায় প্রকাশক জেমস বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে শুনে এবার প্রথম এলেন কলকাতায়। রাজডাঙার নব উদয়ের এবারের থিম ‘প্রশ্ন’। তা ঘুরে দেখার পর জেমস বলেন, ‘দিস ইজ মার্ভেলাস!’ তাঁর কথায়, ‘এ আমার কল্পনার বাইরে ছিল। পাবলিক আর্টের এমন গ্ল্যামার-গ্র্যাঞ্জার আগে দেখিনি।’
কাউন্টডাউন আগেই শুরু হয়েছিল। এবার পুজো-দর্শনের পর্দা উঠল শহরে। বৃহস্পতিবার থেকেই ২৪টি নামী মণ্ডপে পুজো শুরুর আগেই ঠাকুর-দর্শন শুরু হয়ে গেল। সৌজন্যে ‘মাস আর্ট’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। গত কয়েক বছরে সংস্থার এই উদ্যোগ আড়ে-বহরে বেড়েছে। বিশেষ করে কলকাতা তথা বাংলার দুর্গাপুজো ইউনেস্কোর তকমা পাওয়ার পর ‘মাস আর্ট’-এর এই উদ্যোগ আরও বেশি করে আকৃষ্ট করেছে। আর সেখানেই দেশি-বিদেশিদের ঢল। বিশেষ করে এবার এই পুজো প্রিভিউ দেখতে বিদেশি দর্শক সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে, দাবি উদ্যোক্তাদের। সংস্থার কর্তা ধ্রুবজ্যোতি বসু (শুভ) বলেন, গতবার আড়াই হাজারের মতো বিদেশি এই উদ্যোগে ঠাকুর-দর্শন করেছিলেন। এবারের যা ট্রেন্ড, তাতে সংখ্যাটা ৫০০০ ছাড়িয়ে যাবে। সংস্থার দাবি, এবার প্রায় এক লক্ষ দর্শক পুজোর আগেই ঠাকুর দেখার এই সুযোগ নিতে চলেছেন।
এদিন রাজডাঙা নব উদয় সংঘে পুজো প্রিভিউ শো’র উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, ইউনেস্কোর সাউথ এশিয়ার ডিরেক্টর, কলকাতার মার্কিন কনসাল জেনারেল, পুজো উদ্যোক্তা সুশান্ত ঘোষ সহ অন্যান্যরা। এই মঞ্চ থেকে একটি গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে প্রিভিউ শো। রোজ সন্ধ্যা ছ’টা থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত ঠাকুর দেখার সুযোগ মিলবে। বলা যেতে পারে, এই উদ্যোগের হাত ধরেই শহরজুড়ে শুরু হয়ে গেল আলোর রোশনাই, ঢাকের বাদ্যি।
এবারের পুজো-প্রিভিউতে বিশেষভাবে সক্ষমদের ঠাকুর দেখানোর জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে কখন কী হচ্ছে, তাঁদের বোঝানোর জন্য সর্বক্ষণ একজন মিডিয়েটর ছিলেন। তিনি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে সব বুঝিয়েছেন। মণ্ডপে ছিল র্যাম্প। যাতে হুইলচেয়ারে করেও ঠাকুর দেখা যায়। আর এভাবে পুজোর আগেই প্রতিমা দর্শন করে খুশি স্পেশাল চাইল্ড রিয়া সর্দার, সলমন শেখ, রিঙ্কি মিস্ত্রিরা। ফিরহাদ হাকিম ও সুশান্ত ঘোষ কয়েকজন বিশেষভাবে সক্ষমদের হুইলচেয়ার ঠেলে নিয়ে মণ্ডপে ঢোকানোর ব্যবস্থা করেন। ফিরহাদের কথায়, দুর্গাপুজো এখন বিশ্বজনীন। টাইমস স্কোয়ারে কলকাতার দুর্গোপুজোর আবহ তুলে ধরে কার্নিভ্যালের মতো আয়োজন হচ্ছে। শুধু বাঙালিরা নয়, ভিনদেশিরাও এখন দুর্গাপুজোর প্রতি আকৃষ্ট। আর এবার পুজো প্রিভিউতে যেভাবে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা এককথায় অনবদ্য।