• শান্তিনিকেতনে চন্দ্রনাথের স্ত্রীর ব্যবসা খতিয়ে দেখছে ইডি
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ফের নতুন মোড়। রাজ্যের কারা ও ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের স্ত্রীর ব্যবসায় দুর্নীতির টাকা ঢুকেছে কি না, সেই প্রশ্ন ঘিরে নড়েচড়ে বসেছে ইডি। তদন্তে উঠে এসেছে শান্তিনিকেতনের একটি জমি কেনাবেচার ঘটনা। সন্দেহজনক লেনদেন ঘিরে নজরদারিতে চন্দ্রনাথের পরিবারের একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও।

    ইডির চার্জশিটে উল্লেখ, চন্দ্রনাথের স্ত্রী বিকাশ ভক্ত নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ‘বি কে কনস্ট্রাকশন’ নামে জমি কেনাবেচার সংস্থা গড়ে তুলেছিলেন। বিকাশ ইডিকে জানায়, ব্যবসার কাজকর্ম তিনিই সামলাতেন, চন্দ্রনাথের স্ত্রী ছিলেন ‘স্লিপিং পার্টনার’। তাঁর দাবি, প্রথমেই ৭ লক্ষ টাকায় ৩ কাঠার বেশি জমি কেনা হয়েছিল ওই সংস্থার নামে। তবে সেই টাকার উৎস নিয়েই সন্দেহ গভীর হচ্ছে।

    তদন্তে জানা যায়, ২০১৮ সালে শান্তিনিকেতন ট্যুরিস্ট লজের বিপরীতে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকায় জমি কেনেন চন্দ্রনাথের স্ত্রী। পরে সেখানে বিকাশের আরেক সংস্থা একটি ছ’তলা ভবন তোলে। ফ্ল্যাট বিক্রি থেকে অন্তত ১ কোটি ১৬ লক্ষ টাকা পান চন্দ্রনাথের স্ত্রী। এর পরও একাধিক প্রকল্পে চন্দ্রনাথের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করেছেন বিকাশ।

    কিন্তু ইডির দাবি, এই টাকার উৎস ‘কৃষি ও ব্যবসা’ নয়, বরং শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির টাকা। চার্জশিটে উল্লেখ, নোটবন্দির সময়ে চন্দ্রনাথের স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৪৪ লক্ষ টাকার জমা দেখানো হলেও বাস্তবে জমা হয়েছিল মাত্র ৭ লক্ষ টাকা। অথচ বোলপুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে নগদ ৪১ লক্ষ টাকা।

    চন্দ্রনাথের স্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, সব ব্যবসা ও আর্থিক কাজ সামলাতেন তাঁর স্বামী। তাঁর নিজের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভূমিকা ছিল না। কিন্তু ইডির বক্তব্য, এইসব লেনদেন আসলে চাকরি বিক্রির টাকাকে বৈধ ব্যবসার আড়ালে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল।

    প্রসঙ্গত, এর আগেই কুন্তল ঘোষ ও তাপস মণ্ডলের জবানবন্দিতে চন্দ্রনাথের নাম উঠে এসেছিল। অভিযোগ, প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অন্তত ১৫৯ জন অযোগ্য প্রার্থীর নাম পাঠিয়েছিলেন তিনি। কুন্তলের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া লাল খাতাতেও মিলেছিল তাঁর নাম। ইডি জানিয়েছে, বারবার তলব করা হলেও চন্দ্রনাথ তদন্তে হাজির হননি। নগদ টাকার উৎস নিয়ে অসঙ্গতি এবং আয়কর রিটার্নের ভিন্ন তথ্যই প্রমাণ করছে, প্রকৃত অর্থের উৎস গোপন করা হচ্ছে। তদন্তকারীদের দাবি, এই বিপুল টাকা আসলে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির টাকাই, যা জমি কেনাবেচা ও কৃষি ব্যবসার নামে দেখানো হচ্ছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)