ছোট থেকে যে বাবা-মা সন্তানের দেখভাল করে তাঁকে বড় করে তোলে, সেই ছেলেমেয়ে বড় হয়ে যাওয়ার পর তাঁদের দায়িত্ব বৃদ্ধ বাবা-মায়ের খেয়াল রাখা। কিন্তু বাস্তবের চিত্রটা এখন সম্পূর্ণ আলাদা। সমস্ত নীতিবোধের জলাঞ্জলি দিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতে সন্তানরা দুবার ভাবছেন না। বৃদ্ধ বয়সে তাঁদের ঠাঁই হচ্ছে অন্যত্র। বুধবার এরকমই এক স্পশর্কাতর ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা হাইকোর্ট।
বাবা মনোয়ারা মারা যাওয়ার পর ছেলে মগবুল বলেছিলেন, মায়ের যত্ন নেবেন। ছেলের প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা করে ছেলেকে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দিয়েছেন মা। কিন্তু নিজের দেওয়া কথা আর শেষ পর্যন্ত রাখেনি মগবুল। বৃদ্ধ মাকে বাড়ির বাইরে বের করে দেন তিনি। সেই মা অসহায় অবস্থায় আশ্রয় চান উকিলের বাড়ি। অবশেষে আদালতের বিচারে নিজের বাড়ি ফিরে পেয়েছেন বৃদ্ধা।
জানা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগণার হালিশহরে মনোয়ার আলি আনসারি মারা যাওয়ার আগে ২০১৩ সালে তাঁর বাড়ি স্ত্রী আসমা বেগমের নামে লিখে দেন। এরপর থেকে ছোট ছেলে মায়ের সব দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটে ঠিক তার বিপরীত ঘটনা। যত সময় গড়াতে থাকে, মায়ের প্রতি ছেলে মগবুলের উদাসীনতা আরও বাড়তে থাকে। শ্বশুরবাড়ির সকলে ধীরে ধীরে জায়গা করে নেয় বাড়িতে। শেষমেশ মায়ের স্থান হয় বাড়ির বাইরে। নিজের উকিলের বাড়িতে আশ্রয় নেন বৃদ্ধা আসমা বেগম। অবশেষে হাইকোর্টের দ্বাারস্থ হন তিনি।
মামলা চলাকালীন হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা চূড়ান্ত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, বৃদ্ধাকে পুলিশের নজরদারিতে বাড়ি ফেরানো হবে। ছেলেকে মায়ের খাওয়াদাওয়া ও ওষুধের সব দায়িত্ব নিতে হবে। মায়ের যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। কোনও প্রকার অভিযোগ এলে ছেলের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি।