• পুজোয় দুর্গার চরণে বাবরের চাষের পদ্ম, লাভ-লোকসানের প্রত্যাশা না করেই জোগানে ব্যস্ত
    আনন্দবাজার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ব্যবসা মানেই লাভ-লোকসানের চিন্তা। কিন্তু সেই লাভ-লোকসানের প্রত্যাশা না করেই, দুর্গারপুজোর জন্য প্রতি বছর ভালবেসে পদ্মফুল চাষ করেন বর্ধমানের শেখ বাবর।

    পুরাণ অনুযায়ী, আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস দেবতাদের নিদ্রাকাল। রাবণকে পরাজিত করার উদ্দেশে রামচন্দ্র অকালেই দেবীকে জাগিয়েছিলেন। তিনি ১০৮টি নীলপদ্ম দিয়ে দুর্গার পুজো করেছিলেন। সেই থেকেই বাসন্তী পুজোর বদলে ‘অকাল বোধন’ অর্থাৎ শরতের শারদীয় দুর্গাপুজো ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেয়ে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে পরিণত হয়েছে। চলে আসছে দুর্গাপুজোয় দেবীর চরণে ১০৮টি পদ্ম নিবেদন করার রীতিও। তাই লাভ-লোকসানের কোনও প্রত্যাশা না-করেই বছরের পর বছর ধরে বাবর পদ্ম ফুলের চাষ করেন। তাঁর চাষ করা পদ্মে এ বছরও বাংলার বিভিন্ন মণ্ডপে পূজিত হবেন দেবী দুর্গা।

    পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কালনা গ্রামের বাসিন্দা বাবর। তাঁর দাদা পদ্মফুল চাষ করা শুরু করেছিলেন। দাদা মারা যাওয়ার পর বাবর চাষের দায়িত্ব নেন। সেই থেকে প্রায় ৩০ বছরেরও বেশী সময় ধরে তিনি পদ্ম ফুল চাষ করেন। শেখ বাবর বলেন, “পূজারী ব্রাহ্মনের কাছে শুনেছি দুর্গাপুজোয় পদ্মফুলের গুরুত্ব অনেক। আমার এলাকার হিন্দু ধর্মের মানুষজন দুর্গাপুজোর সময়ে আমার কাছ থেকে পদ্ম ফুল নেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকেন। পুজোয় পদ্ম ফুল না পেলে তাঁরা ব্যাথিত হন। সেটা আমার খুবই খারাপ লাগে। তাই লাভ-লোকসানের কথা না ভেবেই আমি পদ্ম চাষ ধরে রেখেছি।” বাবর আরও জনানা, খণ্ডঘোষ ব্লকে পদ্ম ফুল চাষের উপযোগী জলাশয়ের অভাব নেই। তাই তিনি তাঁর লোকজন নিয়ে চৈত্র মাস থেকে জলাশয় পরিষ্কার করে পদ্ম চাষে লেগে পড়েন। সার-সহ বিভিন্ন ওষুধপাতি যথাযথ ভাবে ব্যবহার করে তিনি জলাশয়কে পদ্ম চাষের উপযোগী করে তোলেন। এর জন্য সরকারী কোনও সুবিধা না পেলেও, নিখুঁত পরিচর্যা করে পদ্ম ফুল উৎপাদন করেন বাবর। কার্তিক মাস পর্যন্ত তিনি যথাযথ ভাবে পদ্ম দফুলের যোগান দিয়ে যেতে পারেন।

    হিন্দুদের সব থেকে বড় পার্বণ দুর্গাপুজো। সেই দেবী দুর্গা এ বছরও বাবরের চাষ করা পদ্মফুলে পূজিত হবেন। দেবীর চরণে নিবেদিত করা হবে বাবরের নিজের চাষ করা পদ্ম ফুল। এ বিষয়ে বাবর একটু আবেগ প্রবণ হয়ে বলেন, “আমার চাষ করা পদ্ম ফুল দেবী দুর্গার চরণে দিয়ে পুজোপাঠ হয়। এতে অসুবিধার কি আছে? আমার তো ভালই লাগে। আমি মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন হওয়া সত্ত্বেও, আমার চাষকরা পদ্ম ফুলে দুর্গা ঠাকুরের পুজো হয়, এটাই বড় কথা। এর জন্য অনেকে আমাকে ভক্তি করে, ভালও বাসেন।”

    পূজারী স্বপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দেবী দুর্গা মায়ের পুজো হয় সবার মঙ্গল কামনায়। সেই মঙ্গল কামনায় জাত ধর্মের কোন ভেদাভেদ থাকে না। কারণ দেবীর কাছে সকল মানুষই সমান। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী ‘নর-ই নারায়ন’। পদ্মফুল চাষী শেখ বাবরও একজন ‘নর’ অর্থাৎ মানুষ। এটাই তাঁর বড় পরিচয়। স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ মুসলিম কন্যাকে কুমারী পুজো করেছিলেন। কাজেই বাবরের চাষকরা পদ্ম ফুলও দেবীর পুজোয় সমান মূল্যবান। এটাই দুর্গাপুজোর বড় স্বার্থকতা।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)