• স্বপ্ন ডাক্তারি, সায় কোর্টের
    আনন্দবাজার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • এক জনের নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়েছিল দুর্ঘটনায়। ১৩ বছর বয়স থেকেই হুইলচেয়ার-বন্দি হয়ে পড়েছিল জীবন। অন্য জনের শরীরে প্রতিবন্ধকতা এসেছিল ভাইরাসবাহিত রোগের হাত ধরে। এই সমস্যা উপেক্ষা করেই ‘নিট’ পাশ করেও ডাক্তার হওয়ার পথে এগিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বাদ সেধেছিল প্রতিবন্ধকতার মূল্যায়ন। এ রাজ্যের হাসপাতালের মূল্যায়নে ডাক্তারি পড়ার অনুমতি পাচ্ছিলেন না পুরুলিয়ার চন্দনকুমার মাঝি এবং মালদহের প্রশান্তকুমার মণ্ডল। শেষমেশ হাই কোর্টের নির্দেশে ফের স্বপ্নপূরণের আশা জেগেছে তাঁদের মনে। দিল্লি ও মুম্বইয়ের দু’টি হাসপাতালের রিপোর্টের ভিত্তিতেই বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু দু’জনকেই ডাক্তারি পড়ার ছাড়পত্র দেন সম্প্রতি।

    আদালতের খবর, ২০১৫ সালে এক দুর্ঘটনায় কোমরের নীচ থেকে অসাড় হয়ে গিয়েছিল চন্দনের। চলাফেরা কার্যত ছিল হুইলচেয়ারে। তবে স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। তাঁর আইনজীবী আলাউদ্দিন আহমেদ জানান, প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেই চলতি বছরে ‘নিট’-এ শারীরিক প্রতিবন্ধতা বিভাগের মেধা তালিকায় ২২০৩ স্থান পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এসএসকেএম হাসপাতাল শারীরিক অক্ষমতার মূল্যায়ন করে তাঁকে ডাক্তারি পড়ার অনুমতি দেয়নি। বলা হয়, চন্দনের নিম্নাঙ্গ কর্মক্ষম না-হওয়ায় ডাক্তারি পড়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না।

    সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন চন্দন। তাঁর আইনজীবী জানান, মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার মনোনীত ১৬টি হাসপাতালের মধ্যে দিল্লির লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রতিবন্ধকতার পুনর্মূল্যায়ন করেন মামলাকারী পড়ুয়া। সেই হাসপাতাল জানিয়েছে, প্রতিবন্ধী হিসেবে ডাক্তারি পড়ার উপযুক্ত চন্দন। সেই রিপোর্ট কোর্টে পেশ করার পর ভর্তির অনুমতি দেন বিচারপতি বসু। রাজ্যের কৌঁসুলিও জানান, দিল্লির হাসপাতালের মূল্যায়নের ভিত্তিতে চন্দনকে ভর্তি করা হয়েছে।

    একই ভাবে আটকে গিয়েছিলেন মালদহের প্রশান্তও। পোলিয়ো আক্রান্ত হওয়ায় শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর আইনজীবী সরওয়ার জহান জানান, সেই সমস্যা নিয়েই প্রশান্ত পড়াশোনা করেছেন। ‘নিট’-এ শারীরিক প্রতিবন্ধী বিভাগের মেধা তালিকায় ৩৬২৭ স্থান ছিল তাঁর। কিন্তু এ রাজ্যের এসএসকেএম হাসপাতাল প্রতিবন্ধকতা মূল্যায়ন করে প্রশান্তকে ডাক্তারি পড়ার অনুমতি দেয়নি। তার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা করেন প্রশান্ত। বিচারপতি বসু নির্দেশ দেন, এসএসকেএম বাদে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার মনোনীত অন্য হাসপাতাল থেকে প্রতিবন্ধকার মূল্যায়ন করতে হবে প্রশান্তকে। তিনি মুম্বই এমস থেকে সেই মূল্যায়ন রিপোর্ট আইনজীবী মারফত কোর্টে জমা দিলে ডাক্তারি পড়ার অনুমতি দেয় কোর্ট।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)