• 'হাফিস সইদের সঙ্গে দেখা করার জন্য মনমোহন সিং আমাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন', বিস্ফোরক দাবি ইয়াসিন মালিকের
    আজকাল | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: জঙ্গি, অনুপ্রবেশকারীদের মদত দেয় কংগ্রেসে। দিন কয়েক আগেই এই দাবি করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মোদি। বিজেপির অভিযোগ, সন্ত্রাসবাদ এবং পাক নীতি নিয়ে মনমোহন সরকার খুবই উদাস ছিল। এসবের মধ্যেই সেই আমলের এক নয়া এবং বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে এল। জঙ্গিদের অর্থ দিয়ে সহায়তার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক দাবি করলেন যে, সন্ত্রাসবাদী নেতা তথা পাক মদতপুষ্ট লস্কর-ই-তৈয়বা-র (এলইটি) প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সইদের সঙ্গে দেখা করার পর তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। হাফিজ সইদ ২৬/১১ হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী।

    চলতি বছর ২৫ এপ্রিল দিল্লি হাইকোর্টে জমা দেওয়া একটি হলফনামায়, ইয়াসিন মালিক দাবি করেছেন যে- ২০০৬ সালের বৈঠকটি তাঁর স্বাধীন উদ্যোগে ছিল না বরং পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে ঊর্ধ্বতন ভারতীয় গোয়েন্দা আধিকারিকদের অনুরোধে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

    জঙ্গি নেতা মালিকের বিবৃতি অনুসারে, ২০০৫ সালে কাশ্মীরে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর পাকিস্তান সফরের আগে গোয়েন্দা ব্যুরোর (আইবি) তৎকালীন বিশেষ ডিরেক্টর ভি. কে. জোশী দিল্লিতে জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (জেকেএলএফ)-এর নেতা ইয়াসিন মালিকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই বৈঠকে জোশীই, ইয়াসিন মালিককে অনুরোধ করেছিলেন যে- তিনি কেবল পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গেই নয়, বরং হাফিজ সইদ-সহ জঙ্গি নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করার সুযোগটি কাজে লাগান। ইয়াসিনের দাবি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর শান্তি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার লক্ষ্যেই এই অনুরোধ করেছিলেন জোশী। 

    মালিক দাবি করেন যে তাঁকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে- সন্ত্রাসবাদী নেতাদের আলোচনায় না আনা হলে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা কোনওমতেই অর্থবহ হতে পারে না। জোশীর অনুরোধের ভিত্তিতে ইয়াসিন মালিক পাকিস্তানে একটি অনুষ্ঠানে হাফিজ সইদ এবং ইউনাইটেড জেহাদ কাউন্সিলের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে রাজি হন।

    মালিক তাঁর হলফনামায় বর্ণনা করেছেন যে, কীভাবে সইদ জিহাদি গোষ্ঠীগুলির একটি সমাবেশ আয়োজন করেছিলেন। সেখানে সইদ সন্ত্রাসবাদীদের শান্তি গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ইসলামী শিক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন যে, তিনি হিংসার বিরুদ্ধে পুনর্মিলনের জন্য চাপ দিয়েছিলেন, জোর দিয়েছিলেন যে "যদি কেউ আপনাকে শান্তির প্রস্তাব দেয়, তার সঙ্গে শান্তি বজায় রাখুন।"

    এই বৈঠকটি বহু বছর পরে আলোড়ন সৃষ্টি করে কারণ এটি পাকিস্তানি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে বিচ্ছিন্নবাদী নেতা ইয়াসিন মালিকের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ হিসাবে চিত্রিত হয়েছিল। মালিক তাঁর হলফনামায় এই ঘটনাকে "ধ্রুপদী বিশ্বাসঘাতকতা" বলে অভিহিত করেছেন। জোর দিয়ে বলেছেন যে, এটি একটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদিত উদ্যোগ যা পরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিকৃত করা হয়েছিল।

    ইয়াসিন মালিকের বক্তব্যের সবচেয়ে বিস্ফোরক অংশ হল ভারতে ফিরে আসার পর কী ঘটেছিল তার বর্ণনা। তিনি দাবি করেন যে, আইবি-কে সবকিছু বলার পর তাঁকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি বলতে বলা হয়েছিল। কারাবন্দি নেতার দাবি, রাজধানীতে তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এম. কে. নারায়ণনের উপস্থিতিতে মনমোহন সিয়ের-এর সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। সেখানেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাঁকে ব্যক্তিগতভাবে পাকিস্তানের সবচেয়ে কট্টরপন্থী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টা, ধৈর্য এবং নিষ্ঠার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানান

    প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে মালিকের করমর্দনের একটি ছবি তুলে ধরে আদালতকে কারাবন্দী সন্ত্রাসবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক বলেন, "প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যখন আমি মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে দেখা করি, তখন তিনি কোনও দ্বিধা ছাড়াই বলেছিলেন, আমি আপনাকে কাশ্মীরে অহিংস আন্দোলনের জনক বলে মনে করি।"

    এয়াসিন মালিক তাঁর হলফনামায় অটল বিহারী বাজপেয়ী, সোনিয়া গান্ধী, পি চিদাম্বরম, আই কে গুজরাল এবং রাজেশ পাইলট-সহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ এবং সাক্ষাতের কথাও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছেন।
  • Link to this news (আজকাল)