আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় পর রাজধানী দিল্লিতে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (Special Intensive Revision – SIR) শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে রাজনীতির ময়দানে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা ও বিতর্ক। অভিযোগ উঠছে—এই প্রক্রিয়া ভোটারদের অযথা হয়রানি করছে এবং রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের ভোটাধিকার খর্ব করার হাতিয়ার হতে পারে।
দিল্লির মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক (CEO) দপ্তর জানিয়েছে, এবার ভোটার যাচাই হবে ২০০২ সালের তালিকার ভিত্তিতে। পূর্বে যেমন বাড়ি বাড়ি গিয়ে এনুমেরেটররা তথ্য সংগ্রহ করতেন, এবার প্রতিটি ভোটারকেই নিজ উদ্যোগে বুথ লেভেল অফিসারদের (BLO) কাছে ফর্ম ও নথি জমা দিতে হবে।
যাদের নাম ২০০২ এবং বর্তমান উভয় তালিকায় আছে, তাদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকা থেকে নির্যাসসহ ফর্ম জমা দিতে হবে। যারা ২০০২ সালের পর প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছেন বা দিল্লিতে বসবাস শুরু করেছেন, তাদের পিতা-মাতার নাম পুরনো তালিকায় থাকলে সেই প্রমাণ দেখিয়ে সঙ্গে নিজেদের পরিচয়পত্র জমা করতে হবে।
এক নির্বাচনী আধিকারিকের দাবি, এর উদ্দেশ্য হল “যোগ্য ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দেওয়া।” তবে বিরোধীরা আশঙ্কা প্রকাশ করছে—এটি ভোটার বঞ্চনার অজুহাত হয়ে উঠতে পারে। এই বিশেষ পুনর্বিবেচনা শুরু হচ্ছে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি বিধানসভা নির্বাচনের বিতর্কের প্রেক্ষাপটে। সেই নির্বাচনে বিজেপি ও আম আদমি পার্টি (AAP) একে অপরকে ভোটার তালিকা কারচুপির অভিযোগে আক্রমণ করেছিল।
তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ করেছিলেন, মাত্র ১৫ দিনে তাঁর আসনে ৫,০০০ ভোটার নাম মুছে ফেলার এবং ৭,৫০০ নতুন নাম যুক্ত করার আবেদন করা হয়েছিল। যাচাইয়ে দেখা যায়, নাম বাদ দেওয়ার আবেদনগুলির বড় অংশই প্রকৃত দীর্ঘদিনের বাসিন্দা।বিজেপি পাল্টা অভিযোগ তোলে যে, আপ অস্বাভাবিকভাবে ৩০-৪৮ বছর বয়সিদের নাম তালিকায় যোগ করেছে, যা সন্দেহজনক।
বর্তমানে বিজেপি দিল্লির SIR প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়েছে, দাবি করেছে এটি “ভুয়ো নাম ও অনুপ্রবেশকারীদের” চিহ্নিত করবে। অন্যদিকে কংগ্রেস আশঙ্কা করছে, এটি বিহারের মতোই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া হয়ে উঠবে, যেখানে বিরোধী সমর্থকদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।বিহারে বর্তমানে একই ধরনের পুনর্বিবেচনা দিল্লির রাজনীতিকে আরও সজাগ করে তুলেছে।
১ আধার বিতর্ক: বিহারে শুরুতে নির্বাচন কমিশন আধার কার্ডকে বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। একাধিক আইনি লড়াইয়ের পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আধার ১২তম বৈধ নথি হিসেবে যুক্ত হয়।
২. ভোটার বাদ পড়া: আগস্টে প্রকাশিত খসড়া তালিকায় দেখা যায়, মোট ৭.৮৯ কোটির মধ্যে ৬৫ লাখ ভোটার বাদ পড়েছেন। কমিশনের দাবি—এরা মৃত, অন্যত্র সরে গেছেন বা ডুপ্লিকেট। বিরোধীরা অভিযোগ করে, প্রকৃত নাগরিকদেরই বিশেষ করে শ্রমজীবী ও গ্রামীণ দরিদ্রদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।
৩. তথ্যের স্বচ্ছতা: প্রথমে বিহারে ডিজিটাল, সার্চযোগ্য পিডিএফ তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর অভিযোগের পর ৯ আগস্ট সেগুলি বদলে অ-সার্চযোগ্য স্ক্যানড ফাইল দেওয়া হয়, যাতে বৃহৎ পর্যায়ে তথ্য যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে।
বর্তমানে দিল্লির ২০০২ সালের তালিকা ওয়েবসাইটে মেশিন-রিডেবল ফরম্যাটে পাওয়া যাচ্ছে। মূল প্রশ্ন হল—নতুন খসড়া তালিকাও কি এই মানদণ্ড বজায় রাখবে, নাকি বিহারের মতো স্ক্যানড ইমেজ প্রকাশ করে স্বচ্ছতা কমিয়ে দেবে?রাজধানীর বিপুল সংখ্যক আন্তঃরাজ্য অভিবাসী ভোটারের কারণে এই প্রক্রিয়ায় শঙ্কা আরও বাড়ছে। নাগরিক সমাজের আশঙ্কা—নতুন নিয়মে বহু প্রকৃত ভোটার বাদ পড়তে পারেন। এখন নজর নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপে—স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া বজায় থাকবে, নাকি রাজনৈতিক বিতর্ক আরও ঘনীভূত হবে।