• বীভৎস! গলায় চুইং গাম আটকে ভয়াবহ বিপত্তি একরত্তি কিশোরীর, কোনওরকমে প্রাণে বাঁচল, জানুন ...
    আজকাল | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিপদ কখনও সতর্কবার্তা দিয়ে আসে না। খেলতে খেলতে একরত্তি মেয়ের জীবনেও যে এমন ঘোর সঙ্কট নেমে আসতে পারে, তা কে-ই বা ভাবতে পেরেছিল! তবে এটাও ঠিক, ঈশ্বরের দূতেরা হয়তো ছড়িয়ে থাকেন আমাদের আশেপাশেই, সাধারণ মানুষের ছদ্মবেশে। মঙ্গলবার কেরলের কণ্ণূর জেলার পাল্লিকারা এলাকায় ঠিক তেমনটাই ঘটল। গলায় চুইং গাম আটকে যখন এক কিশোরীর প্রাণ ওষ্ঠাগত, তখন দেবদূতের মতোই ত্রাতা হয়ে আবির্ভূত হলেন কয়েকজন স্থানীয় যুবক। তাঁদের উপস্থিত বুদ্ধি আর তৎপরতায় সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এল একটি তরতাজা প্রাণ।

    সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সূত্রপাত মঙ্গলবার বিকেলে। পাল্লিকারা এলাকার এক রাস্তায় নিজের সাইকেল নিয়ে খেলছিল বছর দশেকের এক কিশোরী। খেলার ফাঁকেই একটি চুইং গাম মুখে পুরে দেয় সে। কিন্তু কে জানত, সামান্য এই চুইং গামই কিছুক্ষণের মধ্যে তার জীবনে সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে দেখা দেবে! আচমকাই সেটি গলায় আটকে গিয়ে তার শ্বাসনালী প্রায় বন্ধ হয়ে আসে। তীব্র অস্বস্তিতে ছটফট করতে থাকে সে, মুখ দিয়ে কোনও শব্দ করারও ক্ষমতা ছিল না। চারিদিকে তখন আর পাঁচটা দিনের মতোই ব্যস্ততা, পথচলতি মানুষের আনাগোনা। কিন্তু ছোট্ট মেয়েটির এই আকস্মিক বিপদ প্রথমে কারও নজরেই আসেনি।

    তবে হার মানেনি সে। যন্ত্রণার মধ্যেও ঠান্ডা মাথায় উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগায়। দেখে, রাস্তার উল্টোদিকে কয়েকজন যুবক একটি সবজির দোকানে কেনাকাটা করছেন। কোনও রকমে সাইকেলটি ঠেলে নিয়ে তাঁদের দিকেই এগিয়ে যায় সে। তার চোখের ইশারা আর ছটফটানি দেখেই যুবকদের বুঝতে বাকি থাকেনি যে, বড় কোনও বিপদ ঘটেছে।

    এরপর যা ঘটল, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে এক যুবক শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। এরপর শিশুটির পেট সামান্য চেপে ধরে পিঠে পর পর চাপড় মারতে শুরু করেন। বিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘হেইমলিখ ম্যানুভার’-এর প্রাথমিক পর্যায় বলা হয়, যা শ্বাসনালীতে আটকে থাকা কোনও বস্তু বার করে আনতে সাহায্য করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রাথমিক পাঠ না থাকলেও, উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের জোরে যুবকটি যা করলেন, তা কোনও প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর চেয়ে কম নয়। পাশে স্কুটারে বসে থাকা আর এক ব্যক্তিও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন। কয়েক মুহূর্তের সেই রুদ্ধশ্বাস চেষ্টার পর অবশেষে শ্বাসনালী থেকে বেরিয়ে আসে চুইং গামটি। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে স্বাভাবিক হয় কিশোরী। এ যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা।

    গোটা ঘটনাটি কোনও এক পথচারী নিজের মোবাইলে ক্যামেরাবন্দী করেন। বুধবার সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়। যুবকদের এই নিঃস্বার্থ সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে গোটা নেটপাড়া। যেখানে আজকাল পথদুর্ঘটনায় আহত মানুষ রাস্তায় কাতরাতে থাকলেও অনেকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে না এসে মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকেন, সেখানে এই যুবকদের নিঃস্বার্থ তৎপরতা এক নতুন দিশা দেখাল। নেটিজেনরা প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন তাঁদের। পাশাপাশি, বিপদের মুহূর্তে ভয় না পেয়ে সাহায্য চাওয়ার জন্য ওই কিশোরীর উপস্থিত বুদ্ধিরও প্রশংসা করেছেন সকলে।

    এই ঘটনা নজর এড়ায়নি কেরলের শিক্ষামন্ত্রী ভি শিবনকুট্টিরও। তিনি ফেসবুকে ওই যুবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, “কণ্ণূরের পাল্লিকারাতে চুইং গাম গলায় আটকে যাওয়া এক শিশুর প্রাণ বাঁচাল কয়েকজন যুবক। আপনাদের ধন্যবাদ।” এই ঘটনা থেকে প্রমাণ মেলে, প্রাথমিক চিকিৎসার জ্ঞান এবং সঠিক সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মানসিকতা থাকলে অনেক বড় বিপদও এড়ানো সম্ভব।
  • Link to this news (আজকাল)