‘মানিক না-থাকলে গাইবই না’! শিলিগুড়ির ছেলের জন্য জ়ুবিনের লড়াই, ২০ বছরের সম্পর্ক হঠাৎই ‘স্মৃতি’
আনন্দবাজার | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
জ়ুবিন গার্গ। সুগায়ক তো বটেই, ভাল মানুষ হিসাবেও পরিচিতদের কাছে তিনি ছিলেন অনন্য। ৫২ বছরের গায়কের অকালমত্যুর অভিঘাত শুধু অসমকেই নয়, নাড়িয়ে দিয়েছে মুম্বই থেকে টালিগঞ্জকে। প্রিয় ‘জ়ুবিনদা’র মৃত্যুতে শোকস্তদ্ধ শিলিগুড়ির ছেলে মানিক সরকার। দুই দশক জ়ুবিনের সঙ্গে কাজ করেছেন পেশায় সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার ওই যুবক। অগুনতি স্মৃতির কথা বলতে বলতে গলা ধরে এল তাঁর। জ়ুবিন নেই— এই কঠিন সত্য মানতেই পারছেন না তিনি।
মানিক জানান, শুধু পেশাগত সম্পর্ক নয়, জ়ুবিনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল দাদা-ভাইয়ের মতো। ‘ইয়া আলি’ থেকে ‘বোঝে না সে বোঝে না’ গায়কের পরিবারের সঙ্গেও তাঁর নিবিড় যোগাযোগ। উত্তর-পূর্ব ভারত হোক বা উত্তরবঙ্গ, দেশ হোক বা বিদেশ, ২০ বছর জ়ুবিনের ‘শো’ যেখানে, সেখানেই জুড়েছেন মানিক। মানিকের কথায়, ‘‘বাংলার ছেলেকে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জ়ুবিন অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পর্যন্ত লড়েছেন। বলেছেন, ‘মানিক ছাড়া জ়ুবিন অনুষ্ঠান করবে না।’’’ শিলিগুড়ির ডাবগ্রামের বাড়িতে বসে ওই সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আরও বলেন, ‘‘এই বাড়িতে ওঁর কম স্মৃতি নেই। কত গল্প হয়েছে এখানে। দুপুরে খাবার খেয়েছেন। মুহূর্তের মধ্যে সব কিছুই কী ভাবে অতীত হয়ে গেল!’’
স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসেন মানিক। বলতে থাকেন, ‘‘আমাদের মতো বহু ছেলেকে দাদা তুলে এনেছিলেন। এটাই ছিল জ়ুবিনদা৷ আমার মনে আছে, আলিপুরদুয়ারে ‘শো’ করতে গিয়ে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে আমি কাজ করব, তা আয়োজকেরা মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু দাদা লড়াই করে সেই ‘শো’ করেছিলেন। এমনও বলেছিলেন, ‘মানিক ছাড়া আমি গাইব না।’ এমন বহু স্মৃতি রয়েছে৷ আজ (শুক্রবার দুপুরে সিঙ্গাপুরে মারা যান জ়ুবিন) ওঁর খবরটা শোনার পর বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।’’
মেঘালয়ের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জ়ুবিনের জন্ম। সঙ্গীতের আশপাশেই বড় হয়ে ওঠা। বাবা মোহিনীমোহন বরঠাকুর পেশায় ম্যাজিস্টেট হলেও গান লিখতেন। অহমিয়া কবি ছিলেন। কপিল ঠাকুর ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন। জ়ুবিনের মা ইলি বরঠাকুর ছিলেন গায়িকা। বোন জংকী বরঠাকুর ছিলেন অভিনেত্রী-গায়িকা। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যাওয়ায় পথে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তাঁর। ২ বছর পরে দাদাও মারা গেলেন অনুষ্ঠান করতে গিয়ে!
জ়ুবিনের বাড়ির কথা বলতে বলতে মানিক বলেন, ‘‘আমি অসমে ওঁদের বাড়িতে যাচ্ছি। শুধু জ়ুবিনদা নয়, তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমার নিবিড় যোগাযোগ। কয়েক দিন আগেই কথা হল ফোনে। আর আজ...’’ কেঁদে ফেলেন মানিক।