প্রয়াত জ়ুবিন গার্গ। সিঙ্গাপুরের সমুদ্রে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে সঙ্গীতশিল্পীর। মাত্র ৫২ বছর বয়সে জ়ুবিনের মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন বাংলার টলিপাড়াও। ‘মন মানে না’, ‘চোখের জলে ভাসিয়ে দিলাম’ থেকে শুরু করে ‘পিয়া রে পিয়া রে’—বাংলা ছবিতেও অসংখ্য সফল গান রয়েছে সঙ্গীতশিল্পীর।
জ়ুবিনের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে শোকাচ্ছন্ন সঙ্গীত পরিচালক জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁর পরিচালনায় অসংখ্য গান গেয়েছেন তিনি। আনন্দবাজার ডট কমের সঙ্গে কথা বলতে বলতে গলা ধরে আসে জিতের। তিনি বলেন, “আমার প্রাণের বন্ধু চলে গেল। কত ছোটবেলা থেকে ওকে চিনি। ৩০ বছরের বন্ধুত্ব আমাদের। আমার প্রথম বাংলা ছবি ‘প্রেমী’ থেকে ও আমার সঙ্গে ছিল। কত ছবি যে একসঙ্গে করেছি আমরা।”
জিতের সঙ্গীত পরিচালনা ও জ়ুবিনের কণ্ঠ। একসময়ে বাংলা ছবির দর্শকের পছন্দের তালিকা জুড়ে থাকত তাঁদের গান। জিৎ বলেন, “‘মন মানে না’, ‘আয়না মন ভাঙা আয়না’, ‘বোঝে না সে বোঝে না’, ‘পরাণ যায় জ্বলিয়া যায়’, কত হিট গান রয়েছে ওর সঙ্গে।”
কাকতালীয় ভাবে শুক্রবারই স্টুডিয়োতে জ়ুবিনেরই একটি গানের ‘মিক্সিং’-এর কাজ করছিলেন জিৎ। তিনি বলেন, “ওর গাওয়া শেষ বাংলা গানটাও আমার পরিচালনায়। ওই গানের কাজই করছিলাম আজ। সোহমের পরের ছবিতে রয়েছে গানটা। আমি ভাবতে পারছি না, এমন কিছু ঘটতে পারে।”
শোকাচ্ছন্ন রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাঁর প্রথম সফল ছবি ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’-এ ছিল জ়ুবিনের গান— ‘পিয়া রে পিয়া রে’। সেই গানটি বিপুল সাফল্য পাওয়ার পরে দীর্ঘ দিন জ়ুবিন ও রাহুল একসঙ্গে বহু অনুষ্ঠান করেছেন। সেই স্মৃতি হাতড়ে অভিনেতা বলেন, “উত্তরবঙ্গে একসঙ্গে বেশ কিছু অনুষ্ঠান করেছিলাম। পাশাপাশি ঘরে থেকেছি হোটেলে আমরা। সময় কাটিয়েছি। হৃদয়বান, স্টাইলিশ ও খুবই ভদ্র একজন মানুষ ছিলেন।”
জ়ুবিনের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই রাহুল জানতে পেরেছিলেন, গায়কের বোনেরও দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল। তাই দুর্ঘটনায় জ়ুবিনের মৃত্যুর কথা জেনে অবাক অভিনেতা বলেন, “এ এক অদ্ভুত সমাপতন। জ়ুবিন বলেছিলেন, ওঁর বোনও অভিনেত্রী ছিলেন। শুটিংয়ে যাওয়ার সময়ে পথদুর্ঘটনায় বোনের মৃত্যু হয়েছিল।”
একসময় গায়ক মাদকাসক্ত হয়েছিলেন বলেও শোনা গিয়েছিল। বোনের মৃত্যুশোকেই তিনি মাদকের দিকে ঝুঁকেছিলেন বলে জানান রাহুল। অভিনেতা বলেন, “দুই ভাইবোনকেই দুর্ঘটনা কেড়ে নিল। আমি আর প্রিয়ঙ্কা অসমে গিয়েছিলাম। জ়ুবিন বলে দিয়েছিলেন, কোথায় কোথায় ঘুরতে হবে। অসমে গিয়ে বুঝেছিলাম, জ়ুবিন শুধু গায়ক নয়। সেখানকার মানুষের কাছে তিনি বিরাট বড় ‘আইকন’। কিছু দিন আগেও শিলচরে গিয়ে দেখেছিলাম, ওঁকে ওখানকার মানুষ ঈশ্বরের মতো দেখে।”
বহু ছবিতে দেবের কণ্ঠ হিসেবেও গান গেয়েছিলেন জ়ুবিন। তাই আজ তিনিও শোকাচ্ছন্ন হয়ে সমাজমাধ্যমে লিখলেন, “তোমায় মনে পড়বে ভাই। তোমার আত্মার শান্তি কামনা করি।”