ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে 'মারা' গেলেন বিজেপি নেতার ছেলে!
আজকাল | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যপ্রদেশে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা সামনে এসেছে। রাজগড় জেলার বিজেপি নেতা মহেশ সোনির ছেলে বিশাল সোনি নাকি নিজের ঋণের বোঝা থেকে রেহাই পেতে মৃত্যু ও অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন। পুলিশের তদন্তে প্রকাশ, তিনি প্রায় ১.৪০ কোটি টাকার ঋণগ্রস্ত ছিলেন।
ঘটনার সূত্রপাত ৫ সেপ্টেম্বর ভোরে। সেদিন কালিসিন্ধ নদীতে একটি গাড়ি পড়ে যাওয়ার খবর পায় পুলিশ। দ্রুত ডুবুরি নামিয়ে গাড়ি উদ্ধার করা হয়। গাড়িটি বিশাল সোনির বলে চিহ্নিত হয়, কিন্তু তার ভেতর কাউকে পাওয়া যায়নি। এরপরই ব্যাপক উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। টানা দুই সপ্তাহ ধরে তিনটি আলাদা দল নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তল্লাশি চালায়। এ সময় বিশালের বাবা মহেশ সোনি পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগও তোলেন।
কিন্তু আট দিন কেটে যাওয়ার পরও বিশালের হদিশ না মেলায় পুলিশের সন্দেহ তৈরি হয়। তখনই তারা বিশালের মোবাইল কল ডিটেল রেকর্ড (সিডিআর) খতিয়ে দেখে। তাতেই জানা যায়, তিনি মহারাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এরপর মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে সাম্ভাজি নগরের ফারদাপুর থানার এলাকা থেকে বিশালকে আটক করে।
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বিশাল স্বীকার করেন, তার নামে ছয়টি ট্রাক ও দুটি পাবলিক ভেহিকেল রয়েছে। ব্যবসায় লোকসান ও ঋণের চাপ মিলিয়ে তিনি ১.৪০ কোটির বেশি দেনায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি পুলিশের কাছে বলেন— “আমাকে বলা হয়েছিল যদি মৃত্যু সনদ মেলে, তবে ব্যাংক ঋণ মাফ হয়ে যাবে। তাই এই পরিকল্পনা করি।”
তদন্তে প্রকাশ, ৫ সেপ্টেম্বর ভোর ৫টায় বিশাল গাড়ি চালিয়ে নদীর ধারে যান। সেখানেই হেডলাইট নিভিয়ে গাড়িটি নদীতে ঠেলে দেন। তারপর তিনি তার ড্রাইভারের বাইকে চেপে ইন্দোরে চলে যান। সেখান থেকে সংবাদপত্রে নিজের “মৃত্যুর” খবর পড়তে পড়তে প্রথমে শিরডি, পরে শনি শিংনাপুরে যান। এরপর পুলিশ তার অবস্থান জানতে পারলে, তিনি আবার নতুন নাটক সাজানোর চেষ্টা করেন। নিজের জামাকাপড় ছিঁড়ে, শরীরে মাটি মেখে অপহরণের অভিযোগ করেন ফারদাপুর থানায়। কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, ভারতে কোনও ব্যক্তি নিজের ভুয়ো মৃত্যু সাজালে তার বিরুদ্ধে সরাসরি সংবিধানসিদ্ধ শাস্তির বিধান নেই। সেই কারণে বিশালকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার না করে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় তুমুল চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিজেপি নেতার ছেলে হয়েও এমন নাটক করে ঋণ থেকে বাঁচতে চাওয়া নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে রাজগড়ে।