বিয়ের কথাবার্তা চলার মাঝে ভয়াবহ পরিণতি যুবকের! সামান্য বচসায় এ কী করলেন প্রেমিকা? মাথায় হাত পরিবারের...
আজকাল | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: যে প্রেম বিয়েতে গড়ানোর কথা ছিল, তা-ই রূপ নিল এক মর্মান্তিক পরিণতিতে। বিয়ের আলোচনা গড়াল তুমুল বচসায়। আর তার জেরেই প্রেমিকের বুকে ছুরি চালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল প্রেমিকার বিরুদ্ধে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় যুবকের। মৃত্যুর আগে পুলিশের কাছে দেওয়া তাঁর শেষ বয়ানই এখন এই মামলার মূল হাতিয়ার। এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ঝাড়খণ্ডের ছাত্রা জেলার লাওয়ালং থানা এলাকায়। ঘটনায় অভিযুক্ত যুবতীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম মহম্মদ মুন্তাজির (৩৪)। তিনি লাতেহার জেলার সাসাং গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল ছাত্রা জেলার লামান্তা গ্রামের বাসিন্দা শাব্বু পরভিন ওরফে নূরজাহানের (২৪)। দুজনের পরিবারও তাঁদের সম্পর্কের কথা জানত এবং বিয়ের কথাবার্তাও চলছিল। সেই সূত্রেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে তাঁর গ্রামে গিয়েছিলেন মুন্তাজির।
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের অনুমান, দু'জনের সাক্ষাতের সময় বিয়ের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। কিন্তু সেই আলোচনা ক্রমেই উত্তপ্ত বচসায় পরিণত হয়। মুন্তাজির দ্রুত বিয়ে করতে চাইলেও, নূরজাহান সম্ভবত আরও কিছুটা সময় চাইছিলেন বা অন্য কোনও বিষয়ে তাঁর আপত্তি ছিল। কথা কাটাকাটি যখন চরমে পৌঁছয়, সেই সময়ই নূরজাহান ঘরে থাকা একটি ধারালো ছুরি নিয়ে মুন্তাজিরের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বলে অভিযোগ।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান এবং পুলিশের অনুমান, আচমকা আক্রমণে মুন্তাজির আত্মরক্ষার সুযোগটুকুও পাননি। তাঁর বুকে ও পেটে এলোপাথাড়ি কোপানো হয়। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে মুন্তাজিরকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন। তাঁকে ছাত্রা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁর আঘাত এতটাই গুরুতর ছিল যে, চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে রাঁচীর রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (রিমস)- এ স্থানান্তরিত করার পরামর্শ দেন। অ্যাম্বুলেন্সে রাঁচি নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মুন্তাজির।
তবে এই ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল মুন্তাজিরের মৃত্যুর ঠিক আগেই। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই তিনি পুলিশের একটি টহলদারি গাড়ির সামনে পড়েন এবং যন্ত্রণার মধ্যেই পুলিশকর্মীদের কাছে পুরো ঘটনার বিবরণ দেন। তাঁর সেই মৃত্যুকালীন জবানবন্দির ভিত্তিতেই পুলিশ বর্তমানে শাব্বু পরভিন ওরফে নূরজাহানের বিরুদ্ধে খুনের এফআইআর দায়ের করে।
ঘটনার প্রেক্ষিতে লাওয়ালং থানার ওসি প্রশান্ত মিশ্র জানিয়েছেন, "মৃতের বয়ানের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনার পরই অভিযুক্তকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হামলায় ব্যবহৃত ছুরিটিও উদ্ধার হয়েছে। শুক্রবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে বিচারক জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।"
একটি প্রেমের সম্পর্ক যে এমন হিংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, তা ভেবে শিউরে উঠছেন স্থানীয়রা। যে দু'জন একসঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছিলেন, তাঁদের একজনের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং অন্যজনের জেল হেফাজত- এই ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, দুজনের মধ্যে ঠিক কী নিয়ে বিবাদ চরমে উঠেছিল, তা জানতে অভিযুক্তকে জেরা করা হবে এবং গোটা ঘটনার তদন্ত চলবে।