মুচিয়ার চক্রবর্তী বাড়িতে দেবী দুর্গা পূজিতা হয়ে আসছেন চতুর্ভুজা রূপে
বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
মঙ্গল ঘোষ, পুরাতন মালদহ: সাধারণত দেবী দুর্গা দশভুজা রূপে পূজিতা হন। কিন্তু পুরাতন মালদহ ব্লকের মুচিয়ার চক্রবর্তী বাড়ির ৩০০ বছরের প্রাচীন দেবী দুর্গার দশ হাত থাকে না। এই বাড়ির মা পূজিতা হন চতুর্ভুজা রূপে। মা চার হাতে সাবেকি হিসেবে বিরাজ করেন। সঙ্গে লক্ষ্মী, কার্তিক, গণেশ সহ অন্যান্য দেবদেবী থাকেন। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত কয়েকদিন বৈষ্ণব মতে নিষ্ঠা, শ্রদ্ধা এবং ভক্তির সঙ্গে মায়ের আরাধনা করা হয়। বিশেষ করে অষ্টমীর দিন অন্ন, পরমান্ন, লুচি, পায়েশ, আলু, পটল ভাজা, দই, মিষ্টি, চাটনি সহ ৫০ রকমের ব্যঞ্জন মাকে ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। অঞ্জলি দিতে ওই দিন স্থানীয়দের ভিড় উপচে পড়ে।
চক্রবর্তীদের বাড়ির পুজো আগে অবশ্য মুচিয়াতে হতো না। আগে অবিভক্ত ভারতের বর্তমানে বাংলাদেশের ভোলাহাট থানা এলাকায় হতো। দেশভাগের সময় ওই পরিবার মালদহে চলে আসে। নতুন করে বসবাস শুরু করে মুচিয়াতে। বাড়িঘর, সম্পত্তি ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসায় চক্রবর্তী পরিবার আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়ে। একাধিক সমস্যার কারণে তিন দশকের বেশি সময় পুরাতন মালদহের বাড়িতে মূর্তি গড়ে ঘটা করে মায়ের পুজো হতো না। শুধুমাত্র ঘটে মা পূজিতা হতেন। তবে এখন বেশ কয়েক বছর ধরে পরিবারের সদস্যরা মিলে বেশ জাঁকজমক পূর্ণভাবে মায়ের পুজোর আয়োজন করেন। চক্রবর্তী বাড়ির সদস্য উজ্বল চক্রবর্তী বলেন, আমাদের মা বহু প্রাচীন। আগে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বাংলাদেশে পুজো করতেন। সেই ধারা আমরা বজায় রেখেছি। চতুর্ভুজা মা আমাদের বাড়ির মেয়ের মতো। কেন মা এখানে চতুর্ভুজা? পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এর পিছনে এক জনশ্রুতি রয়েছে। ১০০ বছরের বেশি সময় আগে যখন বাংলাদেশে বাড়ি ছিল সেসময় মায়ের পুজো দশভুজা রূপেই হতো। একদিন সেখানকার বাড়িতে এক শাঁখারী এসে দাবি করেন, আপনার মেয়ে একটু আগে চার হাতে নতুন শাখা পড়েছে। তার দাম দেয়নি। বাড়িতে প্রবেশ করে সদস্যদের থেকে দাম নিতে বলে। পয়সা বাড়িতে কোথায় রাখা রয়েছে, সেটাও ওই মেয়ে বলে দিয়েছে। তখন চক্রবর্তী পরিবারের উপস্থিত সদস্যরা ওই শাঁখারীকে বলেন আমাদের বাড়িতে কোনো মেয়ে নেই। তবে বলে দেওয়া স্থানে অর্থ পান। ওই পরিবারের বিশ্বাস ছিল, স্বয়ং মা এসেছেন। এতে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরবর্তীতে বিসর্জনের সময় ওই বাড়ির প্রবীণ এক সদস্যকে নদীর ঘাটে শুধু চার হাতে শাখা পরে মা দর্শন দেন। এরপর থেকে মা চার হাতেই ভক্তিভরে পূজিতা হন। ফাইল চিত্র