রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার: মায়ের সন্ধ্যারতিতে ঢাক বাজবে কম আওয়াজে। তাও রাত ১০টার আগেই বাজনা বন্ধ করে দেওয়া হবে। বন্যপ্রাণীরা যাতে বিরক্ত না হয় তারজন্য এই ব্যবস্থা। চিলাপাতার গহীন জঙ্গলের ভিতরে এভাবেই উমার আরাধনা হয়। চিলাপাতার জঙ্গলে বনকর্মীদের এই পুজোয় দেশি-বিদেশি পর্যটকরাও ভিড় জমান। অষ্টমীতে অঞ্জলি দেবেন।
চিলাপাতা অরণ্যে এই পুজোর যৌথ উদ্যোক্তা চিলাপাতা ফরেস্ট রিক্রিয়েশন ক্লাব ও নবযুগ ক্লাব। ১৯৭২ সালে বনকর্মী ও তাঁদের পরিবারের হাত ধরে পুজো শুরু হয়েছিল। পরে সহযোগিতার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয় স্থানীয় নবযুগ ক্লাব। আলিপুরদুয়ার জেলা শহর থেকে চিলাপাতার দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিমি। জঙ্গলের সুরক্ষা ছেড়ে পুজোয় পরিবার নিয়ে শহরে গিয়ে ঠাকুর দেখা হয় না বনকর্মীদের। তাই পরিবার নিয়ে পুজোয় গা ভাসাতে ’৭২ সালে চিলাপাতা রেঞ্জ অফিসের পাশে বনকর্মীরা পুজো শুরু করেন। এবার ৫৩ বছর। রেঞ্জ অফিসের পাশে স্থায়ী মন্দিরে মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। পুজোর জন্য বন্যপ্রাণীরা বিরক্ত হবে, বনদপ্তরের পক্ষ থেকে একবার এমন ফতোয়া জারি করা হয়েছিল। সেই ফতোয়ার প্রতিবাদে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন বনকর্মীদের পরিবারের সদস্যরা। রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের হস্তক্ষেপে পরে অবশ্য সেই ফতোয়া তুলে নেয় বনদপ্তর।
পুজো কমিটির সভাপতি চিলাপাতার রেঞ্জার সুদীপ্ত ঘোষ। তিনি বলেন, বুঝতেই পারছেন জঙ্গলের ভিতরে পুজো। বন্যপ্রাণীরা যাতে বিরক্ত না হয় তারজন্য খুব কম আওয়াজে ঢাক বাজানো হয়। তাও রাত ১০টার আগে পর্যন্ত। সাধ্যমতো নির্জনতা বজায় রেখে এখানে আমরা পুজো করি।
কোচবিহারের পাতলাখাওয়া থেকে প্রতিমা আনা হবে। পুজো কমিটির সম্পাদক দীনেশ কার্জি বলেন, স্থানীয় লজ, রিসর্ট ও জিপসি মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়। এর বাইরে আর কারও কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয় না।
পুজো কমিটির উপদেষ্টা মনকুমার রাই বলেন, আমাদের পুজোয় স্থানীয়দের সঙ্গে দেশি বিদেশি পর্যটকরাও গতবারের মতো এবারও অঞ্জলি দেবেন। স্থানীয় লজ, রিসর্টে থাকা পর্যটকরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও অংশ নেবেন। জঙ্গলে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ। তাই পর্যটক ও স্থানীয়দের অষ্টমীতে কলাপাতা ও শালপাতায় খিচুড়ি খাওয়ানো হবে। জল দেওয়া হবে মাটির গ্লাসে।