• হরিহরপাড়ায় ডিটারজেন্ট বিক্রির নামে প্রতারণা, ধরে ফেললেন গৃহবধূরাই
    বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: এ এক অন্য ধরনের প্রতারণা। টার্গেট শুধুমাত্র গ্রামের বধূরা। এক হাতে ডিটারজেন্ট পাউডার। অপর হাতে স্ক্র্যাচ কার্ড। লটারির মাধ্যমে এলইডি টিভি, কুলার ও ওয়াশিং মেশিন পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে চলছে প্রতারণা। গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দামি উপহারের টোপ দিয়ে নকল ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করছে একদল অসাধু ব্যক্তি। প্রতারণার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে স্ক্রাচ কার্ড। হরিহরপাড়ায় ভুয়ো ডিটারজেন্ট বিক্রি করতে গিয়ে গ্রামের বধূদের বুদ্ধিতে পর্দা ফাঁস হল বিশাল প্রতারণা চক্রের। খবর পেয়ে জেলা এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ ও পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হল এক দুষ্কৃতী। ধৃতের নাম সানোয়ার হোসেন। তাদের কাছ থেকে ৮ কেজি ডিটারজেন্ট পাউডার উদ্ধার হয়েছে যা সম্পূর্ণ নকল বলে দাবি করেছে পুলিশ। 

    অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, হরিহরপাড়ার বিডিও অফিস রোড থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছি। তার কাছ থেকে নকল ডিটারজেন্ট পাউডার ছাড়াও ২০০টি ফাঁকা ডিটারজেন্টের প্যাকেট এবং ৮০০টি লটারির স্ক্র্যাচ কার্ড উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া ২৬টি গ্যাস ওভেন, ১০টি এলইডি টিভি এবং ছ’টি এয়ার কুলার মেশিন উদ্ধার করেছি।  

    ডিটারজেন্ট কিনলে তার মধ্যে থাকা কুপন স্ক্র্যাচ করলে গ্যাস ওভেন, এয়ার কুলার কিংবা এলইডি টিভি পাবেন জয়ী ক্রেতারা। বাড়ি বাড়ি ডিটারজেন্ট ফেরি করার সময় এই সমস্ত জিনিসগুলি দেখাত অসাধু চক্রের সদস্যরা। যে পাড়ায় তারা ফেরি করত সেখানকার প্রতিটি বাড়িতেই মহিলাদের ডিটারজেন্ট কিনতে প্রায় বাধ্য করত। এক একটি ডিটারজেন্ট প্যাকেটের মধ্যে একাধিক কুপন রাখা থাকত। যার মধ্যে কয়েকটি কুপন ফাঁকা থাকত আবার কয়েকটি কুপনে আকর্ষণীয় প্রাইজের উল্লেখ থাকত। আবার অনেক ডিটারজেন্ট প্যাকেটে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা জেতার কুপন থাকত। যে ব্যক্তি ডিটারজেন্ট কেনার পর ওই ১০০ টাকা জেতার কুপন পেত, সেটা বিক্রেতাদের দেখালেই সঙ্গে সঙ্গে নগদ টাকা দিয়ে দিত। এরপর চোখের সামনে এয়ার কুলার, গ্যাস ওভেন এবং বিশাল আকারের এলইডি টিভি দেখে অনেকেই লোভ সামলাতে পারতেন না। সেগুলি পাওয়ার আশায় একের পর এক প্যাকেট ডিটারজেন্ট কিনে তাঁরা ভাগ্য পরীক্ষা করতেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে হরিহরপাড়ার বিডিও অফিস রোডে এই ডিটারজেন্ট বিক্রির চক্রটি যায়।   স্থানীয় বাসিন্দা এক যুবক বলেন, প্রত্যেকটি বাড়িতে গিয়ে বলছে একটা করে ডিটারজেন্ট প্যাকেট কিনুন। লটারিতে যা জিতবেন, সেটা আমরা দেব। যে কুপন স্ক্র্যাচ করে গিফট চাইতে যাচ্ছে, তখন প্রায় আট হাজার টাকা চাইছে ওরা। তাহলে কেন এই টাকা দিয়ে আমরা গিফট নিতে যাব। বার বার করে জোর করে ডিটারজেন্ট কেনাচ্ছে। আমি একবার কুলার পেলাম। তখন আগে টাকা চাইছে তারপর পুরস্কার দেবে কি না, ওরা নাকি ভাববে। চারটি করে প্যাকেট কিনতে হচ্ছিল অনেককেই। তারপরে বলছে আগে টাকা দাও, তারপরে এসে আমরা গিফট দিয়ে যাব। স্থানীয় একটি গৃহবধূ বলেন, আমার এখানে চারখানা পুরস্কার উঠেছে। তার মধ্যে একটা এয়ার কুলার এবং একটি এলইডি টিভি রয়েছে। কোনও গিফট না দিয়ে আমার কাছে উল্টে টাকা চাইছে। এটা পুরো প্রতারণা চক্র। যে চারটি গিফট আমরা পেয়েছি তার একটাও দেয়নি। ওই প্রতারণা চক্রের এক সদস্য বলেন, একটি কোম্পানি ডিটারজেন্টের প্রচার করতে আমরা এই গ্রামে এসেছি। এই ডিটারজেন্টের সঙ্গে যে পুরস্কার মিলবে তা নিতে গেলে তো টাকা লাগবে। পুরস্কার না নিলে তো কাউকে টাকা দিতে বলিনি। যারা পুরস্কার নেবে, তাদের পুরস্কার আমরা এনে দেব। 
  • Link to this news (বর্তমান)