• নন্দীগ্রামে সমবায়ের বোর্ড মিটিংয়ে দলেরই ডেলিগেটকে উত্তম মধ্যম বিজেপি নেতাদের
    বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: নিয়োগ পদ্ধতি ছাড়াই সমবায়ে সরাসরি ম্যানেজার ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে লোক ঢোকাতে চাইছে বোর্ড। বিজেপি পরিচালিত নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের মহেশপুর সমবায় সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক এনিয়ে নামও চূড়ান্ত করে ফেলেন। কিন্তু, বোর্ড মিটিংয়ের রেজ্যুলিউশন কপিতে সই করতে চাননি বিজেপির টিকিটে ডেলিগেট নির্বাচনে জয়ী রণজিৎ মণ্ডল। সেই জন্য তাঁকে ঩পেটানোর অভিযোগ উঠল সমবায়ের সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মাইতি ও সম্পাদক বিজয় মালির বিরুদ্ধে। গত ১৭সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টা নাগাদ সমবায় সমিতির বোর্ড মিটিং শেষ হওয়ার পর ওই ঘটনা ঘটে। এনিয়ে সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে নন্দীগ্রাম থানায় এফআইআর করেছেন ওই ডেলিগেট। সেখানে রেজ্যুলিউশনের খাতা নিয়ে টানাহ্যাঁচড়াও চলে বলে অভিযোগ।

    অভিযুক্ত শ্যামাপ্রসাদ বিজেপির প্রাক্তন নন্দীগ্রাম-১ মণ্ডল সভাপতি। বর্তমানে দলের জেলা কমিটির সদস্য। এর আগে বেআইনি অস্ত্র সহ ধরা পড়ে জেলও খেটেছেন। শ্যামাপ্রসাদ বলেন, কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগকারী রণজিৎবাবু বলেন, পার্টিকে সব জানিয়েছি। থানাতেও এফআইআর করেছি।

    ২০২৪ সালে নভেম্বর মাসে গোকুলনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন মহেশপুর সমবায় সমিতির বোর্ড দখল করে বিজেপি। মোট ১২টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১১টি ও তৃণমূল একটি আসনে জয়ী হয়। এই মুহূর্তে ওই ১২নির্বাচিত সদস্য ছাড়াও পঞ্চায়েত সমিতি থেকে একজন এবং তমলুক-ঘাটাল সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ থেকে আরও একজন বোর্ডের সদস্য। তাঁরা দু’জনে দু’টি দল থেকে বোর্ডে প্রতিনিধিত্ব করছেন। নতুন বোর্ড আসার পর দেখা যায়, ম্যানেজার ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদের মধ্যে একজন ভালো চাকরির অফারে কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন, অন্যজন অবসর নেওয়ার পর এক্সটেনশনে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় না গিয়ে বোর্ড দু’জনকে বেছে নিতে চেয়েছে। আর তা নিয়েই ঝামেলার সূত্রপাত।

    মহেশপুর সমবায় সমিতির ম্যানেজার কে হবেন, তা নিয়ে বোর্ডের বিজেপির নির্বাচিত সদস্যরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক বোর্ডেরই ডেলিগেট সত্যরঞ্জন মণ্ডলকে ম্যানেজার হিসেবে চাইছেন। তাঁদের বিরোধী গোষ্ঠী বোর্ডের অপর সদস্য মৃণালকান্তি দাসের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। এনিয়েই গত ১৫দিন ধরে মহেশপুর সমবায়ে গণ্ডগোল চলছে। 

    গত ৬ সেপ্টেম্বর মৃণালকান্তিকে মারধর করে তাঁর মোবাইল কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে শ্যামাপ্রসাদের বিরুদ্ধে। বেশ কয়েক ঘণ্টা ফোন নিজের জিম্মায় রাখার পর সন্ধ্যা নাগাদ ফেরত দেন। উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই গত ১৭ সেপ্টেম্বর বোর্ড মিটিং বসেছিল। ম্যানেজার ও অ্যাকাউন্ট্যান্ট পদে নিয়োগের এজেন্ডায় দু’পক্ষ একমত হতে পারেনি। যেকারণে রেজ্যুলিউশন খাতা নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। সেই সময় রণজিৎবাবু বেধড়ক মার খান।

    বিজেপির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পালের কাছে দু’পক্ষই নালিশ ঠুকেছে। ওই নেতা দু’পক্ষকে বসে মিটমাটের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। মেঘনাদবাবু বলেন, বোর্ডে নির্বাচিত এবং মনোনীত সকলেই নতুন। নিয়ম সম্পর্কে অনেকের কাছে স্পষ্ট ধারণা কম। বোর্ড ক্ষমতায় আসার পর দেখা যায়, দুই কর্মীর মধ্যে একজন কাজ ছেড়ে চলে গিয়েছেন। অপরজন অবসর নিয়েছেন। তাঁর মেয়াদ বাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এই অবস্থায় সমবায় চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দু’জন কর্মী নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়ে। এখন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক নেওয়ার সময় নেই। তাই অস্থায়ী হিসেবে বেছে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এনিয়েই ঝামেলা শুরু হয়েছে।
  • Link to this news (বর্তমান)