• ভিনরাজ্যে বাঙালি হেনস্তার প্রতিবাদে কৃষ্ণনগরে পুজোর থিম ‘সহজ পাঠ’
    বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: ‘ভাষা হারালে হারিয়ে যাবে আমাদের শিকড়, আমাদের অস্তিত্ব’-দুর্গোৎসবের মণ্ডপ ঘুরলে এই হৃদয়স্পর্শী বার্তাই দর্শনার্থীদের মনে জাগবে। ভিনরাজ্যে বাংলায় কথা বলার কারণে বহু মানুষকে অপমানিত হতে হচ্ছে। সেই বেদনা আর ক্ষোভ থেকেই কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়া গ্রাম বারোয়ারি এবছর থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে বাঙালির শৈশবের শিক্ষা-সহজপাঠ।

    মণ্ডপে পা রাখতেই অনেক পিছনে চলে যাবেন দর্শনার্থীরা। সহজপাঠের বইতে আঁকা বিভিন্ন ছবি মণ্ডপে জীবন্ত হয়ে উঠবে। কোথাও ‘আমাদের ছোট নদী’, কোথাও ‘আমাদের কাকিমা’, আবার কোথাও ‘আমাদের বাগান’-প্রতিটি দৃশ্যপট দর্শনার্থীদের ছোটবেলার সেই স্নিগ্ধ দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দেবে। এটা সেই সময় যখন মায়ের স্নেহের পরশের সঙ্গে মাতৃভাষা শিখেছিলেন তাঁরা।

    ১৫০বছরের পুরনো এই পুজোয় এখনও দেবী দুর্গা ‘বড়মা’ নামে পূজিতা হন। গ্রামের মানুষের কাছে এই পুজো শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি মিলনমেলা। ঢাকের বাজনা, শঙ্খধ্বনি, কাশফুল ও ধূপের গন্ধের মাঝে যেখানে একত্রিত হয় আবেগ, ভালোবাসা ও উৎসবের আনন্দ।

    একমাস আগে থেকেই পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গ্রামের যুবকরা দিনরাত এক করে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। থিম তৈরির জন্য থার্মোকল ব্যবহার হচ্ছে। আর সাজসজ্জার জন্য ধান, কালো জিরে, মেথি, সরষে, সাবু সহ নানারকম দানাশস্য ব্যবহার হচ্ছে। বাংলার গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যকেই উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরতে এসব উপকরণ ব্যবহার করছেন উদ্যোক্তারা।

    ক্লাবের সদস্য বিশ্বজিৎ মোদক বলেন, সহজপাঠ শুধু একটি বই নয়, আমাদের শৈশবের স্মৃতি। এখন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রমরমা। নবীন প্রজন্ম মাতৃভাষা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমরা মণ্ডপে প্রতিটি দৃশ্যের মাধ্যমে মানুষকে এই বার্তাই দিতে চাই যে, বাংলা ভাষাকে ভুলে গেলে চলবে না। ভাষা হারালে আমরা নিজেদেরই হারিয়ে ফেলব। মণ্ডপের প্রায় ৮০শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। 

    ক্লাবের সম্পাদক পিন্টু পাল বলেন, আমাদের পুজো এবার ১২৫তম বর্ষে পা দিল। ছোটবেলা থেকে সহজপাঠ আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। তাই এবছর থিমে আমরা সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি। ভিনরাজ্যে বাংলায় কথা বলার জন্য এরাজ্যের মানুষকে যেভাবে অপমান করা হচ্ছে, আমরা এই থিমের মাধ্যমে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি। - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)