• পঞ্চায়েত প্রধানের সই ও স্ট্যাম্প জাল করে বাসিন্দার জমি বেদখল
    বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামে জমি মহার্ঘ হয়ে উঠেছে। সরকারি জমির পাশাপাশি রায়তি জমি দখল হয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে। সাঁকরাইল ব্লকের পাথরা গ্ৰাম পঞ্চায়েতের প্রধানের সই ও স্ট্যাম্প জাল করে বাকড়া গ্ৰামের একশোর বেশি বাসিন্দার জমি অন্যের নামে নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসনের তরফে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। সাঁকরাইল থানার পুলিশ বেআইনি এই কারবারের অভিযোগে শুকরঞ্জন মাহাত নামে এক যুবককে  গ্ৰেপ্তার করেছে । 

    ঝাড়গ্রাম জেলা হওয়ার পর জেলা শহর ও ব্লকের জমির দাম বাড়ছে। জমির অধিকার নিয়ে অশান্তি ক্রমাগত বাড়ছে। জমির দখল নিতে যাওয়ার ঘটনায় জেলার শাসকদলের এক নেত্রীর নাম উঠেছে। বনভূমির জায়গা দখল করে রিসর্ট, লজ গড়ে ওঠার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়া গ্ৰামের ১২৫ জন বাসিন্দার চারশো বিঘা জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি হয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। জেলার প্রশাসনিক মহল এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে। জেলা প্রশাসনের ভূমি ও রেজিস্ট্রি দপ্তর ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে ।জেলা রেজিস্ট্রি দপ্তর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ৪০০ দলিল চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়া, চুনপাড়া, আঙারনালী মৌজায় জমি রেজিস্ট্রেশন করা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকড়া গ্ৰাম ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা জমির মালিকানা পরিবর্তন চক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা ও জমির প্রকৃত মালিকানা পুনরুদ্ধারের দাবিতে প্রশাসনিক দপ্তরে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। বাকড়া গ্ৰামের বাসিন্দা পাপু মাহাতর দাবি, বাবা গণেশ মাহাতর নামে থাকা পাঁচ বিঘা জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছে। দলিলে বাবাকে মৃত দেখানো হয়েছে। সাঁকরাইল ব্লকের ভূমিদপ্তর এলাকার জমি রেকর্ডের কাজ শুরু করার পর বিষয়টি জানতে পারি। বাকড়া গ্ৰামের বাসিন্দা দিল্লেশ্বর মাহাত বলেন, জমি মাফিয়ারা বাকড়া ও আশপাশের গ্ৰামের বাসিন্দাদের জমি বেআইনিভাবে বেশ কয়েকটি কোম্পানি ও কিছু ব্যক্তির নামে রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছে। শুধু কৃষিজমি নয়, বসতবাড়ি ও ডাহি জমিও তার মধ্যে রয়েছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি, এই এলাকায় বিগত দিনে যত জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে তার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। প্রতিটি দলিলের সঙ্গে জমাকৃত ওয়ারিশন সার্টিফিকেট প্রকাশ করতে হবে। জমির প্রকৃত মালিকদের নিখরচায় ডুপ্লিকেট দলিল দিতে হবে। জমি জালিয়াতি চক্রের বিরুদ্ধে অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। সাঁকরাইল ব্লকের পাথরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক বৈষ্ণব বলেন, আমার সই ও স্ট্যাম জাল করেই শতাধিক ব্যক্তির জমি অন্যের নামে রেজিস্ট্রি কর হয়েছে। এমনকী রিফিউজি রিলিভ ল্যান্ড আমার দাদুর নামে যে জমি ছিল তাও অন্যের নামে রেজিস্ট্রি হয়ে গিয়েছে। সাঁকরাইল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। জেলা প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা নিবন্ধক জয়জিৎ চন্দ্র বলেন, জমি রেজিস্ট্রি হলেই মালিকানা বদল হয়ে যায় না। মিউটেশনের পর মালিকানা বদল হয়। তবে আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। জেলা প্রশাসনের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন,  ৩৫ জন লিখিত অভিযোগ জমা  দিয়েছেন। বাকড়া মৌজায় জমি রেকর্ড করতে নিষেধ করা হয়েছে। জেলা পুলিশের ডিএসপি সব্যসাচী ঘোষ বলেন, ভুয়ো তথ্য দিয়ে জমি রেকর্ডের অভিযোগে শুকরঞ্জন মাহাত নামে এক ব্যক্তিকে গ্ৰেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
  • Link to this news (বর্তমান)