ডিজিটাল অ্যারেস্ট: দুবাই থেকে ফোন করে প্রতারক, হায়দরাবাদে পাকড়াও ১
বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ডিজিটাল অ্যারেস্টের ফাঁদে পড়ে হাওড়ার আন্দুল রোডের বাসিন্দা খুইয়েছিলেন ৫৩ লক্ষেরও বেশি টাকা। এই প্রতারণার ঘটনায় হায়দরাবাদ থেকে সৈয়দ উরজউদ্দিন নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে রাজ্যে নিয়ে আসার পর হাওড়া সিটি পুলিশের হাতে উঠে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। কিংপিন দুবাইতে বসে ভিওপি কলের মাধ্যমে প্রতারণা চালাচ্ছে। তাকে ধরতে লুক আউট সার্কুলার জারি করা হবে বলে খবর।
হাওড়া সিটি পুলিশ সূত্রে খবর, গত জানুয়ারি মাসে বি গার্ডেন থানার অন্তর্গত আন্দুল রোডের বাসিন্দা স্বপন সরকারের হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও কল আসে। তাঁকে বলা হয় মুম্বই পুলিশের সাইবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ থেকে এই কল করা হয়েছে। অভিযোগকারী স্বপনবাবুর আধার, প্যান কার্ড ব্যবহার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। সেখানে একাধিক অবৈধ লেনদেনের সন্ধান মিলেছে। এরজন্য তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির মোবাইলে জাল অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট পাঠানো হয়। তাঁকে ঘর থেকে বেরতে নিষেধ করা হয়। তিনি বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চাইলে বলা হয়, টাকা দিলে গ্রেফতারি পরোয়ানা তুলে নেওয়া হবে। জালিয়াতদের কথামতো তিনি দফায় দফায় ৫৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। তারপরেও টাকা দাবি করায় জালিয়াত চক্রের পাল্লায় পড়েছেন বুঝে বি গার্ডেন থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তভার হাতে নেয় হাওড়া সিটি পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানা।
তদন্ত নেমে যেসব অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে, তার মধ্যে একটি অ্যাকাউন্টের মালিককে চিহ্নিত করা হয়। ওই ব্যক্তির নাম সৈয়দ উরজউদ্দিন। এনসিআরপি পোর্টালের তথ্যে উঠে আসে, বিভিন্ন রাজ্য থেকে প্রতারণার টাকা জমা পড়েছে সৈয়দের অ্যাকাউন্টে। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সৈয়দের ঠিকানা ছিল হায়দরাবাদ। তার মোবাইল নম্বরটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে লিংক রয়েছে। এর ভিত্তিতে গত ১১ সেপ্টেম্বর হাওড়া সিটি পুলিশের টিম হায়দরাবাদের অম্বরপেট থানা এলাকায় সৈয়দের ভাড়া বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। ১৬ সেপ্টেম্বর ওই বাড়ি থেকেই তাকে গ্রেফতার করে সাইবার থানা। শুক্রবার তাকে ট্রানজিট রিমান্ডে নিয়ে এসে হাওড়ার সিজেএম গৈরিক রায়ের এজলাসে তোলা হয়। সরকারি কৌঁসুলি তারাগতি ঘটক আদালতে বলেন, ধৃতের অ্যাকাউন্টে জালিয়াতির টাকা ঢোকার প্রমাণ মিলেছে। চক্রের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে রয়েছে দুবাইতেও। সওয়াল শেষে ধৃতকে সাতদিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠায় আদালত।
সৈয়দকে জেরা করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, চক্রের কিং পিন একজন ভারতীয় নাগরিক। সে দুবাইয়ে বসে প্রতারণা ব্যবসা চালাচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাওড়ায় ওই ফোন কল করা হয়েছিল। প্রতারণার টাকা জমা করার জন্য অ্যাকাউন্ট ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে মিউল অ্যাকাউন্টও চলছে। কিং পিনের নির্দেশমতো তার অ্যাকাউন্টে জালিয়াতির টাকা জমা পড়ত। ওই টাকা ক্রিপ্টোতে রূপান্তর হয়ে চলে যেত কিংপিনের কাছে।