আজ মমতার হাতে শারদ-সূচনা, দিশাহীন কৃষিবিলের বিরুদ্ধে কোমর বাঁধছে টালা প্রত্যয়
বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
অর্ক দে, কলকাতা: শহরের দুর্গাপুজোর কাউন্টডাউন শেষ। এবার পুজোর শুরু। আজ, শনিবার শহরের তিন নামী পুজোর উদ্বোধন করতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন প্রথমে টালা প্রত্যয়, তারপর শ্রীভূমি ও শেষে হাতিবাগান সর্বজনীনে যাবেন মমতা। পুজোর ঢাকে পড়বে কাঠি। শহরের পথে নামবে দর্শনার্থীদের ঢল।
টালা প্রত্যয় এবার সেজে উঠেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনায়। এখানে মা দুর্গা অসুরদলনী নন। তিনি চাষির ঘরের কন্যা। আমাদের মনে রাখতে হবে, সভ্যতার উৎস ভূমি। ছোট্ট বীজেই লুকিয়ে থাকে অরণ্যের প্রতিশ্রুতি। আর কেন্দ্রীয় সরকারের দিশাহীন কৃষি বিলে যখন জমির অস্তিত্ব বিপন্ন, কৃষক বঞ্চিত, তখন মা দুর্গা নিজেই লাঙল ধরেছেন। তাঁর পদতলে বধ হচ্ছে ‘ইউরিয়া’ লেখা সারের বস্তা। সেখান থেকে বেরিয়ে আসছে কৃষক স্বার্থ বিরোধী কৃষি বিল। শিল্পকর্মের বুননে কেন্দ্র বিরোধী, কৃষক স্বার্থ বিরোধী প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছে শতবর্ষে টালা প্রত্যয়ের ‘বীজ অঙ্গন’। যে নামের পিছনে লুকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবনা। তাঁর দেওয়া এই নাম সার্থক ভাবেই মণ্ডপে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী ভবতোষ সুতার।
মণ্ডপে ঢোকার পথে চোখে পড়বে কুরুষের কাজের ফুলকপি। চারিদিকে লোহা, বাঁশ, কাঠ, প্লাইউডের কাঠামোতে ফুটে উঠেছে কৃষকের ছবি, তাঁদের দুরাবস্থার কথা। বাংলার গ্রামীণ এলাকার খরের ছাউনি দেওয়া ঘর। বাঁশের উপর জ্বলছে প্রদীপ। মা এই মণ্ডপে নিজেই প্রান্তিক চাষি। তাঁর হাতে ত্রিশূলের বদলে আছে লাঙল। তিনি পা দিয়ে দলে দিচ্ছেন ইউরিয়ার বস্তা। আর তা থেকেই বেরিয়ে আসছে দিশাহীন কৃষি বিলের চুক্তির কাগজ।
বীজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষুদ্র একক। মানব দেহে সেই অপরিমেয় শক্তির নাম চৈতন্য। বীজের মধ্যে এভাবেই সুপ্ত সভ্যতার স্মৃতি। কিন্ত সেই বীজ আজ বিপন্ন। খাদ্য সংকটের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে একক চাষের ফাঁদে আমরা প্রতি সেকেন্ডে হারিয়ে ফেলছি এক-একটা আদিম বীজ, একটা সম্ভাবনা, একটা অভিযোজনের পথ। হারিয়ে ফেলছি পূর্বপুরুষদের আহরণ করা প্রকৃতি-নির্ভর আবাদের কৌশল ও বীজমন্ত্র। যে কৃষি ছিল প্রকৃতির আশীর্বাদ, সে এখন কুক্ষিগত - সার, কীটনাশক ও বীজের জিন কাটাছেঁড়ার গবেষণাগারে। বীজকে নিয়ন্ত্রণ করা মানে খাদ্যশৃঙ্খলকে নিয়ন্ত্রণ করা। খাদ্যশৃঙ্খলের চূড়ায় থাকা মানুষ হয়তো ভুলে গেছে পৃথিবীর সব কিছু একমাত্র তার ভোগ্য নয়। তাই বীজতলার সরল গণিত ক্রমশ জটিল হতে হতে বদলে গেছে বাজার নিয়ন্ত্রিত বীজগণিতে।
ক্লাবের কর্মকর্তা ধ্রুবজ্যোতি বসু (শুভ) বলেন, কলকাতার দুর্গাপুজো বিশ্বের সবথেকে বড় আর্ট ফেস্টিভাল। বিগত ১০-১৫ বছর ধরে কলকাতার দুর্গা পুজোয় বিকেন্দ্রীকরণ বিশ্ব মানচিত্রে কলকাতাকে অন্য স্থানে নিয়ে গেছে। আমরা এবার করেছি বীজ অঙ্গন। মানুষ একমাত্র জীব যারা প্রতিমুহূর্তে বিষ মিশিয়ে খান। আমরা জেনে বা না জেনে যা প্রতিদিন খাচ্ছি, যে ভিন্ন কৃষি নীতি আমাদের প্রতিদিন খাওয়াতে বাধ্য করছে, টালা প্রত্যয়ের বীজ অঙ্গন এবার সেই কথাই তুলে ধরবে।
বিভিন্ন সময় টিজার এসেছে একের পর এক। কখনও বীজগণিত, কখনও আবার সবুজ রবে বাংলা। সর্বশেষে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া নাম ‘বীজ অঙ্গন’ অর্থাৎ ভূমির প্রাঙ্গণ যেখানে রূপ পায় বীজ, ফলে ফসল, সবুজ হয় বঙ্গ-দর্পণ। টালা প্রত্যয়ের শতবর্ষে থিম সং রচনাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মণ্ডপে বিভিন্ন শস্যের বীজ সংরক্ষণ গবেষণা কেন্দ্র আছে। আছে গুদামে ঘর। সার, কীটনাশক এসব মেশানো কিভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর কুপ্রভাব কিভাবে পড়ছে আমাদের জীবনে সবটাই উঠে এসেছে মণ্ডপে। আছে একাধিক লাইভ পারফরম্যান্স।