• সুপ্রিম রায়ে টেট পাশ করতেই হবে ৩ লক্ষ শিক্ষককে
    বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর রীতিমতো আতঙ্ক তাড়া করছে দেশের ৪০-৪৫ লক্ষ প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষককে। রাজ্যের প্রায় তিন লক্ষ শিক্ষক এই আতঙ্কের শিকার। দেশের শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, চাকরি টিকিয়ে রাখতে বা পদোন্নতির জন্য দু’বছরের মধ্যে তাঁদের টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (টেট)-এ উত্তীর্ণ হতেই হবে। শুধুমাত্র ছাড় পাবেন সেই শিক্ষকরা, যাঁদের চাকরি জীবন বাকি রয়েছে পাঁচ বছর বা তারও কম সময়। গত ১ সেপ্টেম্বর বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত এবং বিচারপতি মনমোহনের ডিভিশন বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়। তারপরই দেশজুড়ে কর্মরত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

    স্কুল টিচার্স ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া (এসটিএফআই) বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই আসরে নেমেছে। ‘রাইট টু এডুকেশন’ আইনের ২৩ নং ধারা সংশোধনের দাবি তুলেছে তারা। এই দাবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের কাছে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছে তারা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাঁদের বুনিয়াদি শিক্ষা পর্ষদকে সুপ্রিম কোর্টে ‘রিভিউ পিটিশন’ দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। তামিলনাড়ু এবং কেরলও এনিয়ে আইনি লড়াইয়ের পথেই হাঁটছে বলে খবর। যদিও বিকাশ ভবনের তরফে এখনও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে টিএমসিপির পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি অশোক রুদ্র। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর এবং বিকাশ ভবনে শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরকে বিষয়টি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন শুক্রবার। তিনি বলেন, ‘শিক্ষক শিক্ষণের কেন্দ্রীয় নিয়ামক সংস্থা এনসিটিই কখনওই বলেনি, ২০১০ সালের আগে নিযুক্ত শিক্ষকদের টেট উত্তীর্ণ হতে হবে। কোনও রাজ্য সরকারও এরকম কোনও নির্দেশ দেয়নি। শিক্ষার অধিকার আইন কার্যকর হয়েছিল ২০১০ সালে। তার আগে নিযুক্ত শিক্ষকদের কেন টেট-এর আওতায় আনা হবে?’ প্রসঙ্গত, শিক্ষার অধিকার আইনেই প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকতার চাকরির জন্য টেট উত্তীর্ণ হওয়াকে আবশ্যিক শর্ত করা হয়। 

    অধ্যাপনার ক্ষেত্রে নেট-সেট আবশ্যিক হওয়ার আগে নিযুক্ত কোনও অধ্যাপককে সেই পরীক্ষায় বসতে বাধ্য করেনি আদালত। ডাক্তারির ক্ষেত্রে নিট উত্তীর্ণ না হয়েও রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্সে সফল হয়ে পেশায় প্রবেশ করেছেন লাখো চিকিৎসক। তাঁদের ফের নিট-এ বসতে হচ্ছে না। তাহলে শুধু তাঁদেরই কেন এখন টেট-এ বসতে হবে, প্রশ্ন তুলছেন কর্মরত শিক্ষকরা। আসরে নেমেছেন এক সময়ের পিটিটিআই নেতা, বর্তমানে বিজেপি অনুমোদিত একটি প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সভাপতি পিন্টু পাড়ুইও। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত যখন আইনজীবী ছিলেন, তখন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি এস এস নিজ্জরের রায়ে রাজ্যের ১২৮টি পিটিটিআই এবং ২২টি বিএড কলেজ অবৈধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময় প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে হাজার হাজার ছাত্র সার্টিফিকেটের বৈধতা ফিরে পান এবং পরবর্তী সময়ে চাকরি নিশ্চিত করেন। দলমত নির্বিশেষে এবারও সেই পথেই এগতে হবে বলে মনে হচ্ছে।’ 
  • Link to this news (বর্তমান)