ঠিকাদারের প্রাপ্য মেটাবার নির্দেশ মানা হয়নি, অর্থ ও নগরোন্নয়ন সচিবের বিরুদ্ধে রুল জারি
বর্তমান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর না-করায় এবার রাজ্যের অর্থসচিব এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করল হাইকোর্ট।
ঘটনার সূত্রপাত ২০১৫ সালে। তখন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান কংগ্রেসের মোহিত সেনগুপ্ত। সেসময় পুর এলাকার রাস্তা, স্কুল বিল্ডিং, হস্টেল প্রভৃতি কাজের জন্য টেন্ডার ডাকে পুরসভা। টেন্ডারের যাবতীয় শর্ত পূরণ করে কাজের বরাত পান ঠিকাদার নন্দলাল সাহা। তাঁর আইনজীবী গৌতম ঠাকুর জানান, চুক্তি মেনে কাজ শেষ করেও টাকা পাননি তাঁর মক্কেল। ইতিমধ্যেই পুরবোর্ড ভেঙে যায়। পুরসভায় প্রশাসকের দায়িত্ব পান এসডিও। এরপর প্রাক্তন চেয়ারম্যান মোহিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়। অভিযোগ ছিল, সরকারের অনুমোদন ছাড়াই তিনি ১৪টি টেন্ডার ডেকেছেন। ওইসঙ্গে নন্দলাল সাহার ৮০ লক্ষ টাকা আটকে দেয় পুরসভা।
এর মধ্যে ২০১৭ সালে রায়গঞ্জ পুরসভায় তৃণমূল কংগ্রেসের বোর্ড তৈরি হয়। চেয়ারম্যান হন সন্দীপ বিশ্বাস। এরপরই নন্দলাল সাহার করা কাজ সম্পর্কে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য পুরদপ্তর। পুর ইঞ্জিনিয়াররা যাবতীয় অনুসন্ধান শেষে জানিয়ে দেন, চুক্তি অনুযায়ী সঠিকভাবেই কাজ হয়েছে। গৌতমবাবুর অভিযোগ, এতৎসত্ত্বেও তাঁর মক্কেলের বকেয়া টাকা মেটায়নি পুরসভা। ইতিমধ্যে মোহিত সেনগুপ্তের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এফআইআরও খারিজ হয়ে যায়।
এরপরই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন নন্দলাল সাহা। সেই মামলায় ২০২৩ সালে বিচারপতি অমৃতা সিনহা তাঁর নির্দেশে জানান, মামলাকারী বকেয়া অর্থ পাওয়ার যোগ্য কি না, সমস্ত রিপোর্ট খতিয়ে দেখে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন পুর ও নগরোন্নয়ন দপ্তরের প্রধানসচিব। সমস্ত কিছু যাচাইয়ের পর প্রধানসচিব জানিয়ে দেন, মামলাকারী বকেয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার যোগ্য। তবে পুরসভাকেই সেই অর্থ মিটিয়ে দিতে হবে। যেহেতু সরকারের অনুমোদন নিয়ে কাজ হয়নি, তাই এর দায় সরকার নেবে না। এতকিছু সত্ত্বেও টাকা পাননি নন্দলালবাবু। এরপর মামলাটি আসে বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে। দীর্ঘ শুনানির শেষে বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় তাঁর রায়ে জানান, দু-মাসের মধ্যে পুরসভা যাতে মামলাকারীর যাবতীয় বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেয় তা বিভাগীয় প্রধান সচিবকেই নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু তারপরও সেই নির্দেশ কার্যকর না করে বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় রায়গঞ্জ পুরসভা। পুরসভার আবেদন খারিজ করে তিনমাসের মধ্যে টাকা মিটিয়ে দিতে নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ। এসব সত্ত্বেও টাকা পাননি নন্দলালবাবু। যে-কারণে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছিল, নির্দেশ কার্যকর না-করায়, সেই মামলার সূত্রেই অর্থসচিব এবং নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। পরবর্তী শুনানি নভেম্বরে।