• এমসিসিআই-এর ১২৪তম বার্ষিক সাধারণ সভায় রাজ্যে ৪৯,৫৬১ কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী শিল্পমহল। শুক্রবার কলকাতার তাজ বেঙ্গলে অনুষ্ঠিত হল মার্চেন্টস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) ১২৪তম বার্ষিক সাধারণ সভা। অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তথা রাজ্যের অর্থ দপ্তরের মন্ত্রিসভার মর্যাদাপ্রাপ্ত পরামর্শদাতা ড. অমিত মিত্র এবং আইটিসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সঞ্জীব পুরী।

    এই সভা মঞ্চে একগুচ্ছ বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আসে। স্টিল, বিদ্যুৎ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং পর্যটন ক্ষেত্রের শিল্পপতিরা আগামী দু’বছরে ৪৯,৫৬১ কোটি টাকার বিনিয়োগের ঘোষণা করেন।

    ‘২০৩০ সালের মধ্যে বাংলার জিডিপি দ্বিগুণ করার রূপরেখা’ শীর্ষক আলোচনায় ড. অমিত মিত্র বলেন, রাজ্যের জিডিপি বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে চারগুণ বেড়েছে। কর সংগ্রহ ২০১০-১১ সালে যেখানে ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ হাজার কোটিতে। খরচও বেড়েছে ২১.৬৩ শতাংশ, যার মধ্যে রয়েছে পুঁজি বিনিয়োগ ও সামাজিক খাতে ব্যয়।

    বাঁটালায় চামড়া শিল্পকেন্দ্র স্থাপনকে তিনি রাজ্যের বড় পদক্ষেপ বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি জানান, ইতিমধ্যেই সেখানে ৪১৫টি ট্যানারি গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি তিনি সরকারের ‘দ্বৈত কৌশল’ প্রসঙ্গে ক্ষুদ্র শিল্পে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং বৃহৎ শিল্পে রাজ্যের শিল্পায়নের কথা বলেন। অমিত মিত্রের দাবি, ২০২৪ সালে বাংলার স্টিল শিল্পের বৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশ।

    তিনি আরও জানান, ১০০-র বেশি সংস্থা জমি সংস্কারের মাধ্যমে ফ্রিহোল্ড জমির মালিকানা পেয়েছে। রাজ্যে প্রথমবারের মতো লজিস্টিকস খাতকে ‘শিল্প’ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তিনটি শিল্প করিডর তৈরি করা হয়েছে। সেগুলি হল– ডানকুনি-তাজপুর-রঘুনাথপুর, ডানকুনি-কল্যাণী ও ডানকুনি-ঝাড়গ্রাম। এছাড়া সিলিকন ভ্যালি হাবে ১১টি ডেটা সেন্টার তৈরি হচ্ছে। রাজ্যের ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পে ইতিমধ্যেই ৫০ হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যুক্ত হয়েছেন। ড. মিত্র প্রস্তাব দেন, শিল্প চেম্বারগুলি যদি আইটিআই ও পলিটেকনিককে দত্তক নেয়, তবে দক্ষতা বাড়বে এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হবে।

    সঞ্জীব পুরীর বক্তব্য অনুযায়ী, ‘এক অস্থির বিশ্বে প্রতিযোগিতার নতুন কল্পনা’ শীর্ষক আলোচনায় সঞ্জীব পুরী বাংলার বিশেষত্বের কথা তুলে ধরেন। তাঁর মতে, বাংলা কৃষিতে সমৃদ্ধশালী রাজ্য, জলসম্পদেও সমৃদ্ধ, যা দেশের অনেক রাজ্যে সংকটজনক। এখানে বিনিয়োগের সুযোগ বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে পারে।

    তিনি বাংলায় বিনিয়োগকে এগিয়ে নিতে চারটি দিক নির্দেশ করেন— ১. গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ, ২. সাপ্লাই চেনকে টেকসই করা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা, ৩. প্রতিযোগিতার জন্য টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা, ৪. দক্ষতা বৃদ্ধি করে জনসংখ্যাগত সুবিধাকে কাজে লাগানো।

    এমসিসিআই-এর বক্তব্য অনুযায়ী, সভায় স্বাগত ভাষণে এমসিসিআই সভাপতি অমিত সারাওগি জানান, অর্থনৈতিক বিচারে বাংলা বর্তমানে দেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম রাজ্য। ২০২৫-২৬ সালে বাংলার জিডিপি দাঁড়াবে ২৩৬.১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আগামী অর্থবর্ষে ১০-১২ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা জাতীয় গড়ের থেকে অনেক বেশি। সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্পকে তিনি বাংলার উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)