• এক নম্বর বলে চলছিল ‘‌দু নম্বরী’‌ জিনিস বিক্রি, পুলিশ হানা দিতেই বেরিয়ে এল আসল ঘটনা 
    আজকাল | ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: অভিনব পদ্ধতিতে চলছিল ‘‌এক নম্বর পরিষ্কার’‌ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জাল ডিটারজেন্ট বিক্রির কারবার। বৃহস্পতিবার গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অন্তর্গত ডিইবি এবং হরিহরপাড়া থানা যৌথ অভিযান চালায়। এরপর হরিহারপাড়া বিডিও অফিস সংলগ্ন রাস্তা থেকে এক ব্যক্তিকে জাল ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

    মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (লালবাগ) রাসপ্রীত সিং বলেন, ‘‌জাল ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রির অভিযোগে সানোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার  করা হয়েছে। ওই ব্যক্তি ক্রেতাদের মূল্যবান উপহার দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জাল ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করছিলেন বলে আমরা অভিযোগ পেয়েছি।’‌ 

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত ওই ব্যক্তির হেফাজত থেকে ৮ কেজি ডিটারজেন্ট পাউডার, ২০০টি খালি ডিটারজেন্ট পাউডারের প্যাকেট, ৮০টি লটারির স্ক্র্যাচ কার্ড, ২৬টি গ্যাস ওভেন, ১০টি এলইডি টিভি এবং ছ’‌টি কুলার মেশিন উদ্ধার হয়েছে। জাল ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি এবং বিক্রির এই চক্র কীভাবে কাজ করত পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। 

    সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর থানা এলাকায় ভেজাল ঘি তৈরির একটি চক্র ধরা পড়ে। এরপর ডোমকল এবং সামশেরগঞ্জ থানা এলাকা থেকে জাল মশলা তৈরির একটি চক্র ধরা পড়ে এবং সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ ভেজাল মশলা। এর পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে মুর্শিদাবাদ জেলার অন্য কয়েকটি এলাকা থেকে ভেজাল পানীয় জল এবং ভেজাল ডিজেল এবং পেট্রোল তৈরির চক্রও ধরা পড়েছে। 

    এবার নতুন করে জাল ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রির অভিযোগে এক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হওয়ায় প্রশ্ন উঠে গেল তাহলে কি আসন্ন উৎসবের মরশুমকে কাজে লাগিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলায় বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন ধরণের জাল পণ্য বিক্রি করা শুরু হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সানোয়ার হোসেন নামে ওই ব্যক্তি হরিহরপাড়ার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে ‘‌এক নম্বর সফেদি’‌ ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করছিল। প্রচারের স্বার্থে ওই ব্যক্তি মূলত গ্রামের মহিলাদেরকেই এই  ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করছিল বলে জানা গিয়েছে। 

    সূত্রের খবর, নাম ‘‌এক নম্বরি’‌ ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করার নাম করে ওই ব্যক্তি প্রত্যেক গ্রামবাসীকে বলেছিলেন ডিটারজেন্ট পাউডার কিনলেই প্রত্যেকে পাঁচটি করে লাকি কুপন পাবেন। সেই কুপন ঘষলে তাতে যে পুরস্কার লেখা থাকবে সেটি ক্রেতা পাবেন। 

    বহু ক্রেতা ওই ডিটারজেন্ট পাউডার নিয়ে স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষার পর এলইডি টিভি, এয়ার কুলার, ফ্যানের মত দামী উপহার পাচ্ছিলেন। কিন্তু উপহার দেওয়ার জন্য ওই বিক্রেতা প্রত্যেকের কাছে ৭৬৯৯ টাকা করে দাবি করে বসেন। 

    কওসার আলি নামে এক গ্রামবাসী বলেন, ‘‌ওই ব্যক্তি যেভাবে ‘‌এক নম্বর’‌ কোম্পানির ভাল ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রির নাম করে প্রচার চালাচ্ছিল তাতে অনেকেই আকৃষ্ট হয়। ডিটারজেন্ট পাউডার নেওয়ার পর স্ক্র্যাচ কার্ড ঘষে আমার স্ত্রী একটি এলইডি টিভি এবং এয়ার কুলার পেয়েছিল। কিন্তু পুরস্কার দাবি করতে ওই ব্যক্তি বলে আগে তাঁকে পুরস্কারের দাম বাবদ ৭৬৯৯ টাকা দিতে হবে তারপর উপহার পাওয়া যাবে।’‌ কিন্তু লটারিতে পাওয়া পুরস্কার পেতে কোনও গ্রামবাসী টাকা দিতে রাজি হননি। এরপরই তাঁরা ঘিরে ধরেন ওই ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রেতাকে। পরে জানা যায় ওই ব্যক্তি অত্যন্ত নিম্নমানের জাল ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রি করছিল। এর পাশাপাশি লোকজনকে ঠকানোর জন্য বিভিন্ন দামি উপহারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হত। 

    পুলিশের সন্দেহ, এই জাল ডিটারজেন্ট পাউডার বিক্রির চক্রের সঙ্গে  আরও বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জড়িয়ে রয়েছে। এই চক্রের ব্যক্তিরা গ্রামে কোনও দামি উপহার নিয়ে যেত না। 

    জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‌কম দামি জাল ডিটারজেন্ট পাউডার তৈরি করার জন্য যে সমস্ত রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় তা অত্যন্ত বিষাক্ত (টক্সিক)। এই ধরনের ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করার পর ঠিকমতো হাত না ধুলে এবং ওই রাসায়নিক পেটে গেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাছাড়াও ওই রাসায়নিকের প্রভাবে ত্বকের বড়সড় ক্ষতিও হতে পারে।’‌ 

    ওই আধিকারিক আরও জানান, ‘‌জাল ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার করলে রাসায়নিকের প্রভাবে পোশাকেরও ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও ডিটারজেন্ট পাউডারে থাকা ফসফেট জলে মিশে পরিবেশকে দূষিত করতে পারে।’‌ 

     
  • Link to this news (আজকাল)