ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) কাজে তারাই যে সিদ্ধান্তগ্রহণের একমাত্র অধিকারী, সেই দাবি করে আসছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। প্রশাসনিক গাফিলতি ঠেকাতে হুঁশিয়ারিও দিচ্ছে তারা। কিন্তু তারই মাঝে অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি, লোক নিয়োগ থেকে অর্থের সংস্থানের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজে দীর্ঘসূত্রিতাও খেয়াল করছেন কমিশন-কর্তাদের অনেকেই। এই অবস্থায় তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন যে, কমিশনের শীর্ষ স্তর যতটা গর্জাচ্ছে, ততটা না-বর্ষালে এসআইআর-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ নিখুঁত ভাবে করা যাবে তো? সেই কাজ ত্রুটিপূর্ণ হলে সাধারণ ভোটাররাই যে হেনস্থার মুখে পড়বেন, সেই কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন অনেকে।
সম্প্রতি একটি বৈঠকে জেলা-কর্তাদের উদ্দেশে কমিশন যে বার্তা দিয়েছে তাতে পুজোর ছুটির পরে এসআইআর-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হলেও এ রাজ্যেও প্রস্তুত থাকতে হবে সকলকে। নতুন ভোটার তালিকায় ভুয়ো, অযোগ্য বা বিদেশি নাগরিকদের উপস্থিতি ধরা পড়লে তার দায় বর্তাবে এই কাজে যুক্ত জেলা-আধিকারিকদের উপরেই। কিন্তু এ কাজে কমিশন নিজে কতটা প্রস্তুত তা নিয়ে আধিকারিক মহলেই পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে।
কমিশনের হয়ে এসআইআর কার্যকর করবে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) অফিস। সূত্রের দাবি, সিইও অফিসে অনুমোদিত ১১টি পদস্থ-কর্তার মধ্যে ৭ জন আছেন, বাকি চারটি পদ ফাঁকা। এই পদ পূরণে রাজ্য সরকারের পাঠানো প্রথম নামের তালিকা বাতিল হওয়ায় দ্বিতীয় তালিকায় তিনটি পদের জন্য নাম প্রস্তাব করেছে রাজ্য। তা নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিশন। ইতিমধ্যে একজন কর্তা অবসর নিয়েছেন। আরেকজন ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে অনিয়মিত। তাই এসআইআর-এর বিপুল চাপ সামলানো নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিহারে এসআইআর-এর কাজে এক হাজার ‘ডেটা-এন্ট্রি অপারেটর’ (ডিইসি) নিয়োগ করা হয়েছিল। এ রাজ্যে চুক্তিভিত্তিক ডিইসিদের একাংশের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় গরমিলের প্রমাণ মেলায় এই পদেও স্থায়ী কর্মী চায় কমিশন। এ ব্যাপারে রাজ্যকে বলা হলেও এখনও সাড়া মেলেনি। অনেকেই বলছেন যে, এই কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যথাযথ প্রশিক্ষণ ছাড়া কাজ করলে ভুল হতে পারে। তাতে ভোটারদের হয়রানি বাড়বে বলেই তাঁরা মনে করছেন।
গোটা প্রক্রিয়ায় রাজ্য এবং কমিশনের সমন্বয়ের অভাবও টের পাচ্ছেন আধিকারিকেরা। তাঁরা বলছেন, মাসখানেক আগে সিইও অফিসকে স্বতন্ত্র দফতরের মর্যাদা দেওয়ার বার্তা রাজ্যকে দিয়েছিল কমিশন। রাজ্য সে ব্যাপারে এখনও পদক্ষেপ করেনি। সিইও অফিসকে বর্তমান জায়গা থেকে বড় পরিকাঠামোযুক্ত জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। রাজ্যের অনুমোদন মেলেনি। এসআইআর প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাবিত হস্তক্ষেপ নিয়েও কমিশন যে কড়া অবস্থানে ছিল, কাজে তার প্রতিফলন কতটা থাকবে, তা নিয়েও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
কমিশনের এক অফিসারের কথায়, “ভোটার তালিকায় অসাধু হস্তক্ষেপের কারণে চার আধিকারিকের বিরুদ্ধে কমিশনের প্রস্তাবিত শাস্তির কিছুটা কার্যকর করেছে রাজ্য। বাকিটায় সময় চাওয়া হয়েছিল। দীর্ঘ সময় পেরোলেও, কমিশনের হেলদোল নেই।” আরেক অফিসারের সংযোজন, “বিহারের আসন্ন ভোটে সিসি ক্যামেরার খাতে দেড়শো কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। গত লোকসভায় এ রাজ্যে ক্যামেরার জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় ৫০ কোটি। রাজ্যের উপরে আর্থিক নির্ভরতা রয়ে গেলে উপযুক্ত ব্যবস্থা রাখা সম্ভব হবে না।”
সূত্রের দাবি, গত প্রায় পাঁচ মাসের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনজন উপ-নির্বাচন কমিশনারকে বদল করা হয়েছে। চতুর্থ ব্যক্তি হিসেবে এখন সেই দায়িত্ব পেয়েছেন জ্ঞানেশ ভারতী। তাঁর রাজ্যে এসে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখার কথা। সেই বৈঠকেও এই সব বিষয় উঠতে পারে।